টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী সুন্দরী খাল দখলের পায়ঁতাড়া


১২:১৪ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী সুন্দরী খাল দখলের পায়ঁতাড়া - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের করটিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের হাট সংলগ্ন সুন্দরী খালটি দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। স্থানীয়া একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে ১৬-১৭ ব্যক্তি শত বছরের ঐতিহ্য ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুন্দরী খালের হাটের অংশ জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।

জানাগেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়ার সুন্দরী খালটি কৃত্রিম ভাবে খনন করা হয় ।লৌহজং নদী হতে শুরু হয়ে  ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ  খালটি করটিয়া হাটখোলার পাশ দিয়ে জমিদার বাড়ীর সামনে দিয়ে  প্রবাহিত হয়ে হাবলা বিলে গিয়ে মিশেছে । স্থানীয় জমিদার তার চলাচলের জন্য খালটি খনন করেন। এক সময় জমিদার ও পরিবারবর্গের নৌপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ ছিল এই খালটি। সে সময় এ খাল দিয়ে পানসি নৌকাসহ বড় জাহাজও চলাচল করত। নানা দিক দিয়ে অপার সৌন্দর্যের কারণে জমিদাররা খালটি ‘সুন্দরী খাল’ নামে অভিহিত করেন।

কালের বিবর্তনে খালটির স্রোতধারা হারিয়ে গেছে। অবৈধ দখলদারদের থাবায় খালটি প্রায় বিলুপ্ত। যেটুকু রয়েছে- তাও ময়লার ভাগাড়। স্থানীয় প্রভাবশালী মো. ইউসুব আলীর নেতৃত্বে ১৬-১৭ ব্যক্তি সরকারি মালিকানাধীন সুন্দরী খালটি দখল করে নিয়েছেন।


খালের দুইতীরে গড়ে ওঠেছে স্থাপনা। তবে খালের হাটের অংশে স্থাপনা নির্মাণ করে রীতিমত ভাড়া দিয়ে ফায়দা লুটছে প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ বাড়ি-ঘরও নির্মাণ করেছেন। অবশিষ্ট অংশে ময়লা-আবর্জনা ও দূষিত বর্জ্য ফেলায় এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, এক সময় দেশ-বিদেশের লাখো ক্রেতার সমাগম ঘটত করটিয়া শাড়ির হাটে। সরকারি সা’দত কলেজের  ২৭ হাজারসহ স্থানীয় পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন ওই খালের পাশ দিয়ে চলাচল করে থাকে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে পথচারীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

২০১৬ সালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে সুন্দরী খালের কিছু অংশ দখলমুক্ত করা হলে আবারও দখলে নেমেছে ওই চক্র। স্থানীয় শ্রমিক সমিতির নামে সুন্দরী খালের উপর নির্মিত লাল ব্রিজের কাছে বাণিজ্যিকভাবে খোলা টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। টয়লেটের মলমূত্র সরাসরি যাচ্ছে খালের  পানির সাথে মিশে যাচ্ছে।

সরকারি সা’দত কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, গুটি কয়েক লোকের কারণে করটিয়ারশত বছরের ঐতিহ্য বিলীনের পথে। যে যেভাবে পারছে সুন্দরী খাল দখল করে নিচ্ছে। তাছাড়া এলাকার সব ধরণের বর্জ্য ও মলমূত্র খালে ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে খালের পাশ দিয়ে কেউ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেনা।

করটিয়ার কাপড়ের হাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এক সময় তারা সুন্দরী খালে নৌকা বেঁধে করটিয়া হাট করতেন। বর্তমানে দখল-দূষণে সুন্দরী খাল মরে গেছে। তারা সুন্দরী খাল রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

মো.ইউসুব আলী জানান, তিনি এককভাবে সুন্দরী খাল দখল করেন নাই, আরও ১৫-১৬ জন ব্যক্তিও দখল করেছেন। তিনি সা’দত বাজার বণিক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই মুহূর্তে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি।

করটিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি সৈয়দ মাজেদুল আলম নাঈম জানান, সুন্দরী খালটি করটিয়ার অপার সৌন্দর্যের একটি নিদর্শন। এ খালের জায়গা কেউ কেউ জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন- যা এখনই অপসারণ করা প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. খায়রুল ইসলাম জানান, ইতোপূর্বে যারা সুন্দরী খাল দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল। এছাড়া কিছুদিন আগে খালের একাংশ জুড়ে এইচএম ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ঘর উত্তোলন করার চেষ্টা করায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি পূনরায় খালের জায়গা দখল করে কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মান  করে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী জানান, সুন্দরী খালটি জেলার বাণিজ্যিক রাজধানী করটিয়ার ফুসফুস। জবরদখলমুক্ত করে খালটি প্রবাহমান করা হলে এলাকার মানুষ স্বস্তি পাবে।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।