টাঙ্গাইলে ৭১ টাকায় মিলছে মোরগ পোলাও


০৯:৩১ পিএম, ৩ জানুয়ারী ২০২৩
টাঙ্গাইলে ৭১ টাকায় মিলছে মোরগ পোলাও - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ মাত্র ৭১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিমসহ মোরগ পোলাও। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বাজারে এমন উদ্যোগ অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটিই সত্য। প্রায় তিন মাস ধরে ভ্রাম্যমাণ হোটেলটি পরিচালিত হচ্ছে টাঙ্গাইল পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে।

‘রাযীয বিরিয়ানি’ নামে ভ্রাম্যমাণ ওই হোটেলটি গড়ে তুলেছেন স্থানীয় তিন যুবক। কমমূল্যে সুস্বাদু মোরগ পোলাও বিক্রির এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্রেতাসহ স্থানীয়রা।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মাহুতি আর ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ এর মূল্য ৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাও বিক্রির ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে ৭০ টাকা রেখে বাকি ১ টাকা জমা করে হতদরিদ্রদের মাঝে খাবার সরবরাহ করছেন উদ্যোক্তারা।


সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে খোলা জায়গায় বসেছে ভ্রাম্যমাণ রাযীয বিরিয়ানি নামের হোটেলটি। ১০-১২টি প্লাস্টিকের টুল রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। এর কয়েকটিতে বসে ক্রেতারা খাচ্ছেন। খাওয়া শেষে প্লাস্টিক জারে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কোনো বাবুর্চি বা শ্রমিক নেই হোটেলটিতে।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, হাজী বিরিয়ানি হাউজে ডিমসহ মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৫০ আর ফুল প্লেট ৩০০ টাকা, নান্না বিরিয়ানিতে শাহী মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৫০ আর ফুল প্লেট ২৮০ টাকা, নবাব বিরিয়ানি হাউজে মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৪০ টাকা আর স্পেশাল শাহী বিরিয়ানি হাউজে মোরগ পোলাও বিক্রি হচ্ছে হাফ প্লেট ১৪০ আর ফুল প্লেট ২৮০ টাকায়।

এদিকে রাযীয বিরিয়ানির উদ্যোক্তা কালিহাতীর এলেঙ্গা শামসুল হক মহাবিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ জানান, টাঙ্গাইল পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা বড় ভাই রাজীব হোসেন, সাদিক আর আমি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। তবে কারও চাকরি ভালো লাগেনি। এ কারণে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি। আমাদের উপার্জনসহ সমাজের জন্য কিছু করার কথা মাথায় আসে। ভাবনা থেকেই হোটেল করা আর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মাহুতি ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ আমাদের ভ্রাম্যমাণ হোটেলে মোরগ পোলাওয়ের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৭১ টাকা। এর মধ্যে ১ টাকা অবহেলিত ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রতিদিনই খেতে না পারা ওই ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি জমা হওয়া ১ টাকা থেকে খাবার।

তিনি আরও জানান, সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ব্যতীত পাঁচদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে এই হোটেল। হোটেলে গড়ে প্রতিদিন তাদের ১০-১২ কেজি চালের মোরগ পোলাও বিক্রি হচ্ছে। এই পরিমাণ চালে ১০০-১২০ প্লেট মোরগ পোলাও হয়।

স্পেশাল শাহী দম বিরিয়ানি নামের মোরগ পোলাও তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনিগুড়া চাল, ব্রয়লার মুরগি ও সরিষার তেল। এক প্লেট মোরগ পোলাওয়ে দেওয়া হচ্ছে পোলাওসহ এক টুকরো মুরগির মাংস, হাফ ডিম, লেবু আর শসা। নিজেরাই রান্না করাসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করায় এত কম টাকায় বিক্রির পরও তাদের লাভ হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ বলেও জানান এ উদ্যোক্তা।

টাঙ্গাইল পাসপোর্ট অফিসের গ্রাহক ও হোটেলের ক্রেতা গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল গ্রামের সুমী বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য ৭১ টাকায় বিরিয়ানি মানে অনেক কিছু। এই বিরিয়ানি যদি আমরা হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খেতে যাই তাহলে সর্বনিম্ন বিল হবে ১৪০-১৮০ টাকা। পরিবেশসহ খাবারের মানও ভালো। সরিষার তেল দিয়ে খাবারটি রান্না করায় এটি খুবই স্বাস্থ্যসম্মত।

পাসপোর্ট অফিসে আসা আরেক গ্রাহক ও হোটেলের ক্রেতা এম রতন মিয়া বলেন, টাঙ্গাইল ফুডিস নামের একটি গ্রুপে এই হোটেলটির খোঁজ পাই। বেশ কয়েকবার এই হোটেলের মোরগ পোলাও খেয়েছি। খুবই মানসম্মত। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) পাসপোর্ট অফিসে কয়েকজন বন্ধু মিলে এসেছি। এই সুযোগে পাঁচ প্যাকেট নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই ভাবতে পারেন এই মোরগ পোলাওয়ের দাম কম তাই মান ভালো হবে না। তাদের বলছি, এমনটা নয়। এই হোটেলের মোরগ পোলাও খুবই মানসম্মত ও সুস্বাদু। রিকশা, ভ্যানচালকসহ সব শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে এই মোরগ পোলাওয়ের দাম।

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ এই হোটেলের মালিক রাজীব হোসেন জানান, মানুষকে কম দামে ভালো খাবার দেওয়ার জন্য আমরা এটি প্রাথমিকভাবে শুরু করি। শুরুর পর থেকেই আমরা ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাই। এরই মধ্যে ক্রেতারা এর মান ভালো বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, প্রকৃত বাবুর্চি না হওয়ায় প্রথম দিকে রান্নায় কিছুটা সমস্যা হলেও আড়াই মাসের বেশি সময় হওয়ায় এখন আমরা মানসম্মত রান্না করতে পারছি। এ খাবার প্রতিদিন দুপুরে আমরাও খাই।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।