আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিএনপি অফিসে চেয়ারে বসে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খাচ্ছেন হারুন আর রশিদ নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী।
রবিবার (২৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ ছবি ভাইরাল হয়। ওই আ.লীগ কর্মী রাত-দিন অফিসে আড্ডা দেন।
‘জিয়ার সৈনিক’ নামে ফেসবুক আইডি থেকে হারুন অর রশিদের টেবিলে পা তোলা ও হাতে জ্বলন্ত সিগারেটের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘বাহ্! আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি কুখ্যাত ভূমিদস্যু একাব্বর চেয়ারম্যানের ছেলে ইয়াবা ব্যবসায়ী হারুন বলে কথা ‘
বিএনপির অফিসে হাতে সিগারেট আর টেবিলে পা তুলে বসে থাকা সাধারণ জনগণকে মোটেও অবাক করেনি। কারণ এই এলাকায় স্বজনপ্রীতি রাজনৈতিক হালচাল। কিন্তু প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগের সময় এ স্বজনগুলো কোথায় ছিল?
জানা গেছে, ওই অফিসে উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বসেন। তবে এটি ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। অফিসটি উপজেলার গারোবাজরে অবস্থিত।
আর হারুন ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। তার বাড়ি সিংহচালা গ্রামে। তার বাবা একাব্বর আলী ছিলেন বৃহত্তর রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে লক্ষিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর হারুন পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরত আসেন। পরবর্তীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে আসেন হারুন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। এর ফলেই তিনি পৌঁছে যান বিএনপির অফিস পর্যন্ত। ওই অফিসে দিন-রাত আড্ডা দেন তিনি।’
স্থানীয়রা জানান, তিন মাস আগে বিএনপির এই অফিস উদ্বোধন করা হয়। ১৫ দিন না যেতেই হারুন ওই অফিসে যাতায়াত শুরু করেন। সঙ্গে নিয়ে যান আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকর্মী। রাত-দিন অফিসে আড্ডা দেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য ও লক্ষিন্দর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী আকন্দ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার দোষ কম। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন, তারা এই অফিস পরিচালনা করেন। অর্থাৎ সিনিয়ররা আওয়ামী লীগদের সঙ্গে নিয়ে অফিসে বসেন। বিএনপির সিনিয়ররা আওয়ামী লীগ ছাড়া চলতে পারেন না। জুলাই বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন হারুন। কিন্তু আমাদের কিছু লোক অভয় দিয়ে এলাকায় রাখার ব্যবস্থা করেছে হারুনকে। মনে হয় অফিসটা আমাদের না, আওয়ামী লীগের অফিস।’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় হারুন আর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে বিএনপির অফিস না। এটা খেলাঘর। কারণে-অকারণে ওই ঘরে যাওয়া হয়। ওই ঘরটি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইকবাল তালুকদারের ভাই খোরশেদ তালুকদারের। সম্পর্কে ইকবাল তালুকদার আমার মামা। ছবিটি যে রাতে তোলা হয়েছে সেই রাতে ওই ঘরে আড্ডায় আমার সঙ্গে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম।’
লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জসিম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। গারোবাজারের ওই অফিসটা ইউনিয়ন বিএনপির না, ওইটা ২নং ওয়ার্ড বিএনপির অফিস। ওইখানে বসেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইকবাল তালুকদার।’
ইকবাল তালুকদার বলেন, ‘লক্ষিন্দর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা এ অফিসে বসেন। হারুন আমার বোনের দেবরের ছেলে। সম্পর্কে ভাগনে। কখন সে এই অফিসে এসে এ কাজ করেছে আমি জানি না।’
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে যদি কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলায় সাপের কামড়ে এক স্কুল ছাত্রী ও এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ।
শুক্রবার (৯ মে) রাত ১টায় ঘাটাইলের দেওপাড়া ইউনিয়নের যুগিয়া টেঙ্গর এলাকা ও শনিবার (১০ মে ) সকালে সখীপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের কালমেঘা দক্ষিণপাড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, স্কুলছাত্রী মোছা. আঁখি আক্তার (১৪) ও বৃদ্ধা কাজলী বেগম (৬০)।
আঁখি ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের কালিকাপুর উত্তর পাড়া গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের মেয়ে এবং কাজলী বেগম সখীপুর উপজেলার কালমেঘা দক্ষিণপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
দেওপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম মিয়া বলেন, আঁখি মেধাবী ছাত্রী ছিল। রাতে সে পড়তে বসেছিল, এর মধ্যে টেবিলের নিচে থাকা একটি সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। তীব্র ব্যথায় আঁখি চিৎকার করলে রাতেই তাকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে অ্যান্টিভেমন না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। কিন্তু পথেই মেয়েটির মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকের বরাতে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম মিয়া বলেন, আঁখির পায়ে বিষধর সাপের কামড়ের দাগ ছিল।
এদিকে, কাজলী বেগমের ছেলে হোসেন আলী জানান, তার মা সকালে পানি আনতে ঘরের পাশে নলকূপে যান। সেখানে একটি সাপ তার বাঁ হাতে ছোবল দেয়। এতে তার দুই আঙুলে সাপের দাঁতের দাগ বসে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে বিষয়টি ছেলেকে জানান।
ছেলে হোসেন আলী আরও জানান, মার চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে আমি সাপ দেখতে পারি নাই। কিন্তু হাতে সাপের কামড়ের দাগ দেখে দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। তারপরও মাকে বাঁচাতে পারলাম না।
তিনি জানান, সাপে কামড়ের দেড় ঘণ্টার মধ্যে মাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার মাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ওই নারী মারা গেছেন। তার বা হাতের দুটি আঙুলে ক্ষতচিহ্ন দেখে বিষধর সাপের কামড় বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি থানায় জানিয়ে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
আরমান কবীরঃ নাজির উদ্দিনকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির কথা বলে নেওয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। ১৪ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর পাঠানো হয় রণাঙ্গনে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজিরের। চিন্তায় অস্থির তাঁর বাবা, নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন স্ত্রী। শিশুসন্তান আছে বাবার অপেক্ষায়।
৩৭ বছর বয়সী নাজির উদ্দিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কুরমুশী গ্রামে। অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের একমাত্র সন্তান তিনি।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, ২০১৭ সালে নাজির ইরাকে গিয়েছিলেন। তিন বছর সেখানে চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। নিজ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্যোগ নেন, কিন্তু সফল হননি। তাই আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকার এসপি গ্লোবাল নামের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১২ লাখ ২০ হাজার টাকায় গত ১৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন নাজির উদ্দিন। দুবাই হয়ে রাশিয়ায় পৌঁছান তিনি। তারপর তাঁকে একটি ক্যাম্পে কয়েক দিন রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বিমানে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। ওই জায়গায় ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও কয়েকজনের সঙ্গে ইউক্রেন সীমান্তে নেওয়া হয়।
১৬ এপ্রিল সকালে নাজির টেলিফোনে কান্নাকাটি করে বাবা ও স্ত্রীকে জানান, তাঁদের ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিনের পর থেকে বাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই নাজিরের।
সরেজমিনে ঘাটাইলের কুরমুশী গ্রামে নাজিরদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় উদ্বিগ্ন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। ছেলের খবরের আশায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন।
ছেলেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকার ও রুশ দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফয়েদ উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশা নিয়ে রাশিয়ায় গেছে। তাকে কেন যুদ্ধে পাঠানো হলো? তাকে যারা চাকরি দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছে, তাদের বিচার চাই।
চিন্তায় অস্থির নাজিরের স্ত্রী কুলসুম বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাজির। রাশিয়ায় যাওয়ার পর যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণে পাঠানোর কথা জানতে পারেন, তখন থেকে নাজির প্রতিদিন টেলিফোন করে কান্নাকাটি করতেন। ১৬ এপ্রিলের পর থেকে তাঁর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন, এ বিষয়ে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
কুলসুম বেগম আরও বলেন, আমার একমাত্র মেয়ের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। সেও প্রতিদিন বাবার খবরের আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকারপ্রধানের কাছে আমার দাবি, আমার স্বামীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী মামুনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর বাবা এসেছিলেন। তাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, থানা থেকে যেকোনো সহযোগিতা করা হবে।
সাহান হাসানঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ৩২ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৪), সিপিসি-৩ টাঙ্গাইল।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার সাগরদীঘি বাজার থেকে ৩২ কেজি গাঁজাসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চট্রগ্রামের বুজপুর উপজেলার উদিয়া পাথর গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম খলিল (৩৫) ও জোড়ারগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সোনাই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে বেলাল হোসেন (২৮)।
র্যাব-১৪ টাঙ্গাইল অফিস সুত্রে জানা যায়, র্যাবের একটি চৌকস দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী-ভালুকা-ঘাটাইল আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত মেসার্স হাজী থাই এ্যালুমিনিয়াম এন্ড টাইলস হাউজের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৩২ কেজি গাঁজাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে । উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক বাজার মূল্য ৯,৬০,০০০/-(নয় লাখ ষাট হাজার টাকা)। এ সময় ৩২ কেজি গাঁজা ও মাদকদ্রব্য গাঁজা বহনের কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক এবং গাড়িতে রক্ষিত ১৪ টন সরিষাসহ আটক করা হয়।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৪, সিপিসি-৩ টাঙ্গাইল ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. কাওসার বাঁধন জানান, এ ঘটনায় ঘাটাইল থানায় মামলা দায়েরর্পূবক আসামী ও আলামত হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলে নিখোঁজের ৩ দিন পর সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে আব্দুল আলিম (১৯) নামের এক কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে কালিহাতী পৌরসভার সাতুটিয়া দক্ষিণ পাড়া থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আলিম ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের চানতারা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী জহুরুল ইসলামের ছেলে।
নিহত আলিমের মা আকলিমা আক্তার জানান, আলীম কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
সে গত ১২ এপ্রিল(শনিবার )সকালে কালিহাতীতে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে একটি সুজকি মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ওই দিন দুপুর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। বাড়ি ফিরে না আসায় এ বিষয়ে ঘাটাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
গত তিন ধরে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার(১৪ এপ্রিল) দুপুরে কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া দক্ষিণ পাড়া এলাকার জামাল বাদশা বসতঘরের পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে তারা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় লাশটি উদ্ধার করে।
খবর পেয়ে আলিমের মা আকলিমা আক্তার কালিহাতী থানায় গিয়ে লাশের পরনের পোশাক দেখে লাশটি আলিমের বলে তার শনাক্ত করেন
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আদিবুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আরমান কবীরঃ সৌদি আরবের রিয়াদে টাঙ্গাইলের যুবক সোহেল রানা (৩০) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সোহেলের গ্রামের বাড়ি জেলার ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের গুইয়াগম্ভির কোকরবাড়ি গ্রামে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সৌদি আরবের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের ভাই আল আমিন এবং ৬নং গুইয়াগম্ভির ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল মিয়া সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
সন্ধানপুর ইউনিয়নের গুইয়াগম্ভির কোকরবাড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের ছেলে সোহেল রানা। তার স্ত্রীর নাম মাকসুদা (২৮)। এই দম্পতির মাশরাফি নিয়ত নামে আট বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
সোহেলের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোহেলের বয়োজ্যেষ্ঠ বাবা আব্দুল লতিফ পান দোকানদার। তার একমাত্র ভাই আল আমিন অটোচালক।
সোহেলের বড় ভাই আল আমিন বলেন, সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত বলদিয়া কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল আমার ভাই। পরিবারের অভাব ঘোচাতে গিয়ে সৌদির সড়কে লরিচাপায় জীবনাবসান ঘটে তার। এখন সোহেলের লাশ ফেরত আনা এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তায় আসতেই আমরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সকাল দশটার সময় মোবাইল ফোনে সোহেলের এক সহকর্মী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের বিষয়টি আমাদের জানান। মঙ্গলবার সকালে পথিমধ্যে একটি লরি গাড়ি সজোরে এসে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই সোহেল নিহত হন। তারপর একটু দেরি করে সংবাদটি আমরা আস্তে আস্তে বাবা-মা ও সোহেলের স্ত্রীকে জানাই।
সৌদি আরবে কর্মরত সোহেলের সহকর্মীদের বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য জালাল মিয়া বলেন, পরিবারের অভাব ঘোচাতে চার বছর আগে সৌদি আরব যান সোহেল। মঙ্গলবার ভোরে সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। মরদেহ দেশে আনতে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সাহান হাসানঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ট্রাকচাপায় আকিল মিয়া নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে সাগরদিঘি-ঘাটাইল আঞ্চলিক সড়কের চাম্মলকুড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত আকিল মিয়া উপজেলার সাগরদিঘি ইউনিয়নের শোলাকুড়া গ্রামের জয়নাল মেম্বারের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আকিল মিয়া মঙ্গলবার সকালে মোটরসাইকেল যোগে সাগরদিঘি থেকে ঘাটাইলের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় আষাড়িয়াচালার চাম্মলকুড়ি এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক তাকে ওভারটেক করার সময় মোটরসাইকেলের পিছনে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকের পেছনের চাকার নিচে চলে যায় মোটরসাইকেলের আরোহী আকিল। এ সময় ঘাতক ট্রাকটি পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে আরোহী আকিল মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সম্পর্কে ধলাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় লোকজন না থাকায় ঘাতক ট্রাকটিকে আটক করা যায়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পরকীয়া সন্দেহে মোবারক হোসেন খান নামের এক ব্যক্তির লিঙ্গ কেটে দিয়েছেন তার স্ত্রী মায়া খাতুন।
বুধবার (২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়নের লোকেরপাড়া গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, উত্তর লোকেরপাড়া গ্রামের নুলু খানের ছেলে মোবারক হোসেন খান ও তার স্ত্রী মায়া দীর্ঘদিন ঢাকায় থেকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সম্প্রতি ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে আসেন তারা। কিছুদিন যাবৎ স্বামীর অন্য কোথাও অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। এরই জেরে বুধবার দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঘুমানোর পর স্ত্রী মায়া খাতুন ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্বামী মোবারক হোসেন খানের লিঙ্গ কেটে দেয়। পরে তাকে মূমুর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্ত্রী মায়া জানান, দীর্ঘ ৫ মাস যাবৎ সে অন্য নারীর সাথে যোগাযোগ করে আসছে। আমি বার বার তাকে নিষেধ করলেও মানে না। আমি সহ্য করতে না পেরে এমনটি করেছি। তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না।
এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাটি নিয়ে কোন মামলা হয়নি। পারিবারিকভাবে মিমাংসার চেষ্টা চলছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ডাকাতদের কবলে পড়েছে শিক্ষা সফরের চারটি স্কুলবাস। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে উপজেলার ঘাটাইল-সাগরদীঘি আঞ্চলিক সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ডাকাতরা বাস থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণ ও স্মার্টফোন লুট করেছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে এই সড়কে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটল।
জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মঙ্গলবার ভোরে চারটি বাস নিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা সফরের জন্য রওনা দেন নাটোরের গ্রীনভ্যালি পার্কের উদ্দেশে। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাস চারটি ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল-সাগরদীঘি আঞ্চলিক সড়কের সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছালে তারা ডাকাত দলের কবলে পড়েন। এ সময় সামনের বাসে ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। হঠাৎ তিনিসহ অন্যরা খেয়াল করেন সড়কের মাঝ বরাবর গাছের গুঁড়ি। তিনি বুঝে ফেলেন এই কাজ ডাকাতদের। সতর্ক করেন সবাইকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির জানালা ও গেট। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে গাড়িতে। ডাকাতরা পেছনের গাড়ি থেকে তাদের মালামাল লুট করা শুরু করে। এরই মধ্যে তিনি ফোন করেন ৯৯৯ নম্বরে। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে তিনটি গাড়ির যাত্রীদের থেকে মালামাল লুট করা শেষ হয়ে যায়।
সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ডাকাতরা নগদ টাকা নিয়ে গেছে দেড় লাখ। স্বর্ণ দেড় ভরি। স্মার্টফোন ১০টা। এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন ও অভিভাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার।
সাখাওয়াত হোসাইন রবিন বলেন, আমি ছিলাম দুই নম্বর গাড়িতে। ওই গাড়িতে ছিল শুধু ছাত্রী। ডাকাতরা আমার কাছে থেকে মোবাইল নেওয়ার পর যখন ছাত্রীদের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দেই। এর ফলে তারা আমাকে দায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে।
ডাকাতদের অস্ত্র ও ভয়ঙ্কর রূপ দেখে গাড়িতে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ক শিক্ষক আবুল কালাম।
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সিনথিয়া আক্তার জানায়, ভয়ে সে অনেক কেঁদেছে। এখনও তার ভয় দূর হয়নি।
ডাকাতির ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যেই ওইস্থানে (লক্ষণের বাধা) ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে গাছ ফেলে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে চারটি স্কুলবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সাতটি মোবাইল ও দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে ডাকাতরা। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী জব্দ করে লক্ষধিক টাকা জরিমানা করেছে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ঘাটাইল বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে নাবিল এন্টারপ্রাইজকে ৫০ হাজার টাকা এবং মাহির এন্টারপ্রাইজকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযানকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, ঘাটাইল উপজেলায় ঘাটাইল বাজারে অভিযান পরিচালনা করে দুটি ডিলারকে এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও এই দুটি ডিলারের গোডাউনে বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সামনের রমজানের ঈদকে সামনে নিয়ে এ সমস্ত নকল প্রসাধনী বাজারের ছয়লাব করার চিন্তা ভাবনা করছে এই ব্যবসায়ীরা। কোন অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে কোন সুবিধা নিতে যাতে না পারে এ ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে ।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, ঘাটাইল উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জাহানারা আক্তার, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু জুবায়ের উজ্জ্বলসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
একতার কণ্ঠঃ সাভারে অ্যাম্বুলেন্সে আগুনে নিহত বাবা-মা ও ছেলেকে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নিহত অপরজনকে গোপালপুরে দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি )রাত সোয়া ১১টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত গ্রামে সামাজিক কবরস্থানে নিহত তিনজনের দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতে আগুনে নিহত চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়।
নিহতদের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন— ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ।
নিহেতর এক স্বজন হাবিব সিদ্দিকী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকা থেকে চারজনের মরদেহ রাতে ঘাটাইলে আসে। প্রথমে বাবা ও ছেলের জানাজা হয়েছে। এরপর দুইবোনের জানাজা হয়। পরে সামাজিক কবরস্থানে বাবা মা ও ছেলের দাফন করা হয়। আরেকজনের গ্রামের বাড়ি যেহেতু গোপালপুর সেহেতু সেখানে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার পুলিশ টাউনের সামনে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা যান। নিহতরা হলেন— ঘাটাইলের ভবনদত্ত গ্রামের ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী, তার স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী, ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) ও মহসিনার বোন সীমা খন্দকার। সীমা খন্দকারের বাড়ি পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোপালপুরে বাড়ি।
একতার কণ্ঠঃ ছোট্ট ফাহিমকে (৯) একা রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তার বাবা, মা ও বড়ভাই। একই পথের যাত্রী হয়েছেন তার খালাও।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি)দুপুরে ফাহিমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে রাখা চারটি লাশের খাটিয়া। পাশেই সামাজিক কবরস্থানে চলছে কবর খোঁড়ার কাজ।
খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন স্বজনরা। এসেছেন এলাকাবাসীসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কিছুক্ষণের মধ্যে রবিন মিয়া নামে একজন গোপালপুর থেকে ফাহিমকে বাড়ি নিয়ে আসলেন। উঠোনে চেয়ারে বসতে দেওয়া হল তাকে। ঘিরে ধরলেন স্বজনরা। কেউ একজন পাশে থেকে বাবা-মা আর ভাইয়ের কথা তাকে জিজ্ঞেস করলে জবাবে সে জানায়, ‘মা-বাবা আর ভাই ঢাকা গেছে। লাশ আনতে গেছে মানুষ।’
এতটুকুর বাইরে ফাহিমের মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হচ্ছিল না। মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। চাচি শিউলী বেগম বুকে জড়িয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন সদ্য এতিম ফাহিমকে।
বুধবার রাতে সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার বাবা ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী (৪৭), মা মহসিনা সিদ্দিকী (৩৬), বড়ভাই ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) ও খালা সীমা খন্দকার (৩৮)। ফারুখ তার পরিবার নিয়ে থাকতেন ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ভবনদত্ত গ্রামে। আর সীমা খন্দকারের বাড়ি পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোপালপুরে।
নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকী ছিলেন ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার ছোটভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই একবোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড়ভাই ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মেধাবী ছাত্র। শ্রেণিতে তার রোল দুই। ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী গোপালপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসায় হোস্টেলে থেকে হেফজ পড়ছে। ফুয়াদ হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে ডাক্তার বলেছেন থ্যালাসেমিয়া নয়।
মামুন আরও জানান বুধবার মায়ের সঙ্গে নানার বাড়ি গোপালপুরে যান ফুয়াদ। ওই রাতে হঠাৎ করে বাথরুমে গিয়ে পড়ে যায় ফুয়াদ। দ্রুত রাত ১১টার দিকে তাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তার মা মহসিনা সিদ্দিকা ও খালা সীমা খন্দকার। পথে ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী। মামুন জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।
নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী তার চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকা বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফোনে কথা হয়। এরপর রাতে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের ব্যবহৃত ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সকালে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান ঢাকায় পুলিশে কর্মরত নিহত সীমা খন্দকারের স্বামী।
নিহত ফারুক হোসেন সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান ছিলেন। একজন নীতিবান মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন শিক্ষক আর হবে না। আমাদের সবসময় আগলে রাখতেন।
স্থানীয় দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, রাতে তিনি ফারুক সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি আসেন। এক সঙ্গে চা পান করেছেন। তার ভাষ্য এলাকায় ফারুক সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না। তার মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।
প্রসঙ্গত, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউনের সামনে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা যান।