আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পূর্ব পাশের বায়োস্কোপ চত্বরে “নাগরিক জীবনে পূর্ণিমার প্রভাব” এই থিমকে সামনে রেখে পূর্ণিমা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার )রাত ৮ থেকে ১২ টা পর্যন্ত বায়োস্কোপ চত্বরে এই পূর্ণিমা উৎসব চলবে।
পূর্ণিমা উৎসবে থাকবে কবিতা আবৃতি, লোকগান, যন্ত্র সঙ্গত, “শহরের নাগরিক জীবনে পূর্ণিমার প্রভাব” নিয়ে মুক্ত আলোচনা।
অনুষ্ঠানে গান গাইবেন লিজু বাউলা, মাহবুবুর রহমান সুমন,জেসি আক্তার, নাসির ফকিরা, শাকিল , শিল্পী ঘোষ ,পলাশ প্রমূখ।
কবিতা আবৃতি করবেন, কবি আবু মাসুম,এডভোকেট জিনিয়া বক্স, সৈয়দ সাইফুল্লাহ, কুশল ভৌমিক, তাবাসসুম আরেফিন ছন্দা প্রমূখ।
“নাগরিক জীবনে পূর্ণিমার প্রভাব” নিয়ে আলোচনা করবেন-আবুল কালাম মোস্তফা লাবু।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন, এনটিভির স্টাফ করসপন্ডেন্ট মহব্বত হোসেন।
অনুষ্ঠানটি সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক রিয়াজুল মওলা রিজু,প্রকৌশলী জাহিদ রানা, সাংবাদিক আরমান কবীর, বাপ্পি খান।
অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য পূর্ণিমা তিথিতে সেবার আয়োজন থাকবে।
আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলে শুরু হয়েছে লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব।বুধবার(১৫ জানুয়ারি )সকাল ১১টায় শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কালচারাল রিফরমেশন ফোরাম, টাঙ্গাইলের আয়োজনে তিন দিন ব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন
বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব গোলাম আম্বিয়া নুরী, জেলা বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামিদুল হক মোহন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দর্শকের উপস্থিতিতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ লাঠিখেলা,ও মেয়েদের হাডুডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এ পিঠা মেলায় ৪২ টি স্টলে স্থান পেয়েছে দুধের পিঠা, ভাপা, নকশি, চিতই, পাঠিসাপটা, জামাই বরণ পিঠা, ডাল ও তালের পিঠা সহ বিভিন্ন রকমের পিঠার সমারাহ।
মেলায় দর্শনার্থীরা জানায়, কুয়াশার সকালে কিংবা সন্ধ্যায় হিমেল বাতাসে মুখরোচক পিঠার স্বাদ নেওয়া ভোজন বিলাসী বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ।
চলচ্চিত্র পরিচালক ও মেলায় অংশগ্রহণকারী বাইস্কোপ পিঠাঘরের স্বত্বাধিকারী রিয়াজুল রিজু জানান, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় এই পিঠার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে এজন্য আমি আনন্দিত।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে দেশীয় পিঠার পরিচয় করিয়ে দিতে আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রতি বছর যেন এ রকম লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয় এমনটা প্রত্যাশা তার।
মেলায় ঘুরতে আসা টাঙ্গাইল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রকৌশলী জাহিদ রানা জানান, দীর্ঘদিন পর টাঙ্গাইলে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজনে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমি প্রতিটি পিঠার স্টল ঘুরে দেখেছি। স্টলে বিভিন্ন রকমের পিঠার ডালি সাজিয়ে রেখেছে দোকানিরা। খুব ভালো লাগলো। নতুন নতুন অনেক পিঠার সাথে পরিচিত হলাম। সেগুলোর স্বাদ নিলাম। পিঠাগুলো খুব মজার ছিল।
লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির সদস্য সচিব অনীক রহমান বুলবুল জানান, ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবে থাকবে, লাঠি খেলা, ছেলেদের ও মেয়েদের হাডুডু খেলা, সং যাত্রা, যাদু প্রদর্শন, যাত্রাপালা,পুথি পাঠ, লোকজ গান, গোল্লাছুট, ওপেন টু বাইস্কোপ, বাইস্কোপ, কুতকুত, খেলা সহ, হামদ, নাথে রাসুল, কীর্তন, শ্যামা সংগীত সহ দেশোজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পিঠা উৎসবের মূল আকর্ষণ হল মেলায় ঢেঁকিতে প্রকাশ্যে চিড়াকোটা ও মুড়ি ভাজা হবে। পিঠা কিভাবে তৈরি হয় সেটা দর্শক ও শিশুদের দেখানো হবে।
লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসব কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এই বাংলাদেশে লোকজ সংস্কৃতি বিলুপ্তি প্রায়। যান্ত্রিক যুগে মোবাইলের কারণে শিশুরা লোকজ ও সাংস্কৃতিক থেকে একেবারে দূরে সরে গেছে। লোকজ সংস্কৃতি কি, শিশুরা তা জানে না। সম্প্রতি অভিভাবকের কাছে জানতে পারলাম, শিশু তার বাবাকে প্রশ্ন করেছে মুড়ি কোন গাছে হয়। মুড়ি যে গাছে ধরে হয় না,শিশুর এমন প্রশ্ন দোষের না। কারণ শিশুরা মাঠে-ঘাটে খেলাধুলার বাস্তবতা থেকে অনেকটাই দূরে। সেই অনুভব থেকে আমরা এ রকম লোকজ সাংস্কৃতিক ও পিঠা উৎসবের আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লোকজ ও সাংস্কৃতি আগত ও বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো জানান, মেলায় বাঙালি কৃষ্টি ও লোকজ ঐতিহ্যের স্মারক বাহারি পিঠা প্রদর্শন, ক্রয়, বিক্রয় ও ভোজনুৎসবের পাশাপাশি উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
একতার কণ্ঠঃ ১৯৭৪ সালের ১০মে বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে নিয়ে আসা হয় টাঙ্গাইলে। উদ্যোক্তা ছিলেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। কাদেররিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকীর গাড়ির বহরের সাথে এম্বুলেন্সে এ কবি আসেন টাঙ্গাইল শহরে। পুরো প্রোটোকলের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবীর।
এটাই সম্ভবত ঢাকার বাহিরে কোন জেলা শহরে কবির প্রথম আগমন। কবির সাথী হয়ে এসেছিলেন নাতনি ছোট বয়সী খিলখিল কাজী। প্রথমে কবিকে নিয়ে আসা হয় তৎকালীন পুলিশ প্যারেড ময়দানে। এখন যেটিকে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান বলা হয়।
টাঙ্গাইলের অন্যতম বৃহৎ শিশু-কিশোর সংগঠন নজরুল সেনার পক্ষ থেকে কবিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয় সেখানে। কবিকে এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে আসা হয় ময়দানে। বৃষ্টির মধ্যে কয়েকশত নজরুল সেনা সদস্য সাদা পোশাক পরে গার্ড অব অনার দেন কবিকে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কবির মাথায় পরম মমতা আর শ্রদ্ধায় ছাতা ধরে থাকেন।
এই অনন্য ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন নজরুল সেনার প্রতিষ্ঠাতা এডভোকেট ফজলুল হক খান সাথী। যিনি হাইকোর্টের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী। প্যারেড পর্ব পরিচালনা করেন প্যারেড টিমের প্রধান মরহুম সাংবাদিক কামরুল হাসান চৌধুরী। প্যারেড পরিচালনায় তাকে সহযোগিতায় ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মরহুম হাফিজুর রহমান, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ, নারীদের মধ্যে ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন লিপি খন্দকার রানু, গ্রুপ ক্যাপ্টেন ওয়াহিদা রহমান নতুন।
নজরুল সেনার ব্যান্ড দলে ছিলেন এম,এ মতিন, শাহীন তালুকদার ও বতর্মানে আমেরিকা প্রবাসী শিবলী সাদিক।
জাতীয় কবির টাঙ্গাইলে আগমনের এই আলোকিত স্মরণীয় করে রাখতে নজরুল প্রেমী ফজলুল হক সাথী ভাই টাঙ্গাইল পুলিশ প্যারেড ময়দানের পাশেই ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নজরুল সেনা স্কুল।
তাকে সেসময় অর্থদানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন মরহুম সামসুর রহমান খান শাহজাহান, মরহুম শওকত আলী তালুকদার, খন্দকার জাহিদ মাহমুদ, মরহুম সাংবাদিক কামরুল হাসান চৌধুরী, নুরুল আমীন, প্রয়াত কামাক্ষা নাথ সেন প্রমুখ।
জাতীয় কবির টাঙ্গাইলে আগমনের এই আলোকিত দিনকে স্মরণীয় রাখতে কবি নজরুলের স্মৃতিধন্য তৎকালীন পুলিশ প্যারেড ময়দানের সামনের রাস্তাটিকে অর্থাৎ নিরালা মোড় থেকে জেলা সদর রাস্তাকে কবির প্রতি সন্মান জানিয়ে কবি নজরুল স্মরণী বলা হয়ে থাকে। (ঈষৎ সংশোধিত)
লেখক: প্রফেসর ড.জি.এম.শফিউর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: আল রুহী, আতাউর রহমান আজাদ, এবিএম সালাউদ্দিন আহমেদ।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল শহরে ব্লোমিং বিউটি বাই মুন’র স্কিন কেয়ার শোরুম উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে পৌর শহরের রেজিস্ট্রি পাড়ায় অবস্থিত সাফ শক্তি টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় ব্লোমিং বিউটি বাই মুন’র স্কিন কেয়ারের শোরুম ফিতা ও কেক কেটে উদ্বোধ করেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মডেল বারিশা হক, টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ব্লোমিং বিউটি বাই মুন’র স্বত্বাধিকারী মুন ভুইয়ান প্রমুখ।
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসকে দেখতে শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করেন।
উদ্বোধন শেষে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস বলেন, টাঙ্গাইলের রাস্তা পার হয়ে আমার জন্মস্থান উত্তরবঙ্গে বগুড়া যেতে হয়। টাঙ্গাইলের সাথে আমার ছোট বেলা থেকে একটা ভালো পরিচয় ছিল, সেটা রাস্তার সাথে। আজকে ব্লোমিং বিউটি বাই মুন’র স্বত্বাধিকারী মুনের প্রতিষ্ঠানে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।
আপু বিশ্বাস আরও বলেন, আমার লাল শাড়ীর সিনেমার সাথে টাঙ্গাইলের একটা যোগসূত্র আছে যেখান থেকে চিন্তা ধারা। সেই চিন্তা ধারা থেকেই লাল শাড়ী সিনেমা সৃষ্টি হয়েছে। টাঙ্গাইলে এসে অনেক ভালো লাগছে। আমি প্রিয়তমা ছবি দেখেছি আমার ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেছিলাম। প্রিয়তমা সিনেমা আপনাদের ভালোবাসার সিনেমা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের সিনিয়র আয়কর উপদেষ্টা ও প্রথমআলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কামনাশীষ শেখরের বাবা কবি যুগলপদ সাহা আর নেই।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়াস্থ পাঞ্জাপাড়ার নিজ বাসায় তিনি ইহলোকত্যাগ করেন।
পরলোকগমণকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু সহকর্মী ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার বড় ছেলে দেবাশীষ সাহা আয়কর আইনজীবী, মেঝ ছেলে শুভাশীষ সাহা প্রকৌশলী ও ছোট ছেলে কামনাশীষ শেখর প্রথমআলো পত্রিকার স্থানীয় নিজস্ব প্রতিবেদক এবং একমাত্র মেয়ে বিপাশা সাহা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টায় তার মরদেহ শহরের বড় কালিবাড়ীতে নেওয়া হয়। সেখানে নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেন করেন। পরে কাগমারী দিনমনি মহা শ্মশানে তার অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
যুগলপদ সাহার জন্ম ১৯৩২ সালে। তিনি একজন কবি ও পেশায় আয়কর আইনজীবী ছিলেন। দশটি কাব্যগ্রন্থসহ তার মোট ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
কবি যুগলপদ সাহার মৃত্যুতে আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম(ভিপি জোয়াহের) এমপি, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন সাহিত্যিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে সাপ্তাহিক সমাজচিত্র নামে একটি পত্রিকা আত্মপ্রকাশ করেছে। রবিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনাড়াম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে।
এই প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাভোকেট জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম সুজন,পৗর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মাওলা,টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কবি মাহমুদ কামাল,প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের দপ্তর ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক অরণ্য ইমতিয়াজ।
স্বাগত বক্তব্যে সাপ্তাহিক সমাজচিত্রের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি মামুনুর রহমান মিয়া তার অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, আজ সর্বপ্রথম মনে পড়ছে আমার পিতার কথা। যিনি পেশায় একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে সব বিষয়ে অনুপ্রানিত করেছেন। তার ফসলই আজকের এই সাপ্তাহিক সমাজচিত্র।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত অন্যাণ্য সাপ্তাহিকের মতো গতানুগতিক সংবাদের বাইরেও এই সাপ্তাহিকে টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের প্রকৃত সমাজ চিত্র তুলে ধরা হবে। তিনি পত্রিকাটি সঠিকভাবে চলার জন্য উপস্থিত সকলের গঠনমুলক সহযোগিতা কামনা করেন।
এ সময় টাঙ্গাইল জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
একতার কণ্ঠঃ দেশবরেণ্য ও আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিক হায়দার আলীর বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সংবলিত গ্রন্থ ‘আমার অনুসন্ধান’-এর প্রথম খণ্ড পাঠ উন্মোচিত হয়েছে।
শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজটোয়েন্টিফোর মিলনায়তনে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন বসুন্ধরা গ্রুপ ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
প্রধান অতিথি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, হায়দার আলী আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত একজন তুখোড় অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তিনি কালের কণ্ঠে একের পর এক সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। আমরা সবসময় হয়দার আলীর দুর্নীতি, অনিয়ম, অবব্যস্থাপনা নিয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পক্ষে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো। বইটি তাঁকে উৎসর্গ করায় তিনি লেখককে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এর আগে তিনি কেক কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, প্রায় ১৪ বছর ধরে হায়দার আলী দারুণ সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে চলেছে। ‘বিরল ভালোবাসা’ শিরোনামে তার দেশকাঁপানো মানবিক প্রতিবেদনটির কথা আলাদা করে বলতেই হয়। কেননা, ওই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে হায়দার আলী সাংবাদিকতার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের দাসত্বের জীবন নিয়ে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের মতো দুঃসাহসিক কাজও করেছেন হায়দার, যা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে হায়দার আলী বলেন, আমার সাংবাদিকতার যৌবন পার করেছি কালের কণ্ঠে। পত্রিকাটিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ও সহযোগিতা পেয়েছি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছ থেকে। এই দুজন মানুষের সহযোগিতা, উৎসাহ, ভালোবাসা না পেলে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। আমি উনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক শাহেদ মোহাম্মদ আলী, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরডটকম সম্পাদক জুয়েল মাজাহার, ডেইলি সানের নির্বাহী সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন ইনচার্জ শামসুল হক রাসেল, নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের, কালের কণ্ঠের সিটি এডিটর কাজী হাফিজ, নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ডেপুটি সিএনই আশিকুর রহমান শ্রাবণ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল, চিফ রিপোর্টার মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
হায়দার আলী বর্তমানে কালের কণ্ঠ’র উপ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০১ সালে প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক ‘প্রথম আলো’য় নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। কাজ করেছেন দৈনিক সমকালেও। তবে পেশাগত জীবনের দীর্ঘ সময় কাটছে দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায়। ২০০৯ সালে নির্মাণপর্বেই যুক্ত হন পত্রিকাটির সঙ্গে। স্টাফ রিপোর্টার থেকে সিনিয়র রিপোর্টার, বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে তিনি পত্রিকাটির উপ-সম্পাদক। একইসঙ্গে তিনি দৈনিকটির দুর্নীতি বিরোধী অনুসন্ধানী সেলের প্রধান এবং এর পাঠক সংগঠন শুভসংঘ-এর উপদেষ্টা।
জট খোলা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন ইউনেস্কো-বাংলাদেশ জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দাসত্বের জীবন নিয়ে আলোচিত আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান করে পান মালয়েশীয় প্রেস ইনস্টিটিউটের বিশেষ পুরস্কার।
‘আমার অনুসন্ধান’ বইটিতে পাঠকরা পাবেন এই অনুসন্ধানী সাংবাদিকের দুর্দান্ত সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। যা পড়ে দেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নিজেদেরকে আরো সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে পরবেন। সেই সঙ্গে এই বইটি নতুন প্রজন্মকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা শেখাতে ও চর্চা করতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করবে।
‘আমার অনুসন্ধান’ বইতে পাঠকরা পাবেন জুলুমবাজ-অর্থলোভী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, ব্যাংক লুটেরা, প্রতারক, সন্ত্রাসী, গডফাদার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্ম নিয়ে একের পর এক দুঃসাহসিক সব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। মানবিক সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত হায়দার আলীর সাড়া জাগানো ‘বিরল ভালোবাসা’ প্রতিবেদনও রয়েছে এই গ্রন্থে। রাজপথেই এক নাটকীয় ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে হায়দার আলী দারুণ হৃদয়স্পর্শী এই প্রতিবেদনটি করেন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভিখারি রমিজা পান নতুন জীবনের সন্ধান আর রিপোর্টার হায়দার আলী পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিরল পুরস্কার, স্বীকৃতি আর একটি একান্ত সাক্ষাৎকার।
হায়দার আলী ১৯৭৬ সালের ২৩ মে ঢাকার শ্যামলীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রয়াত সামসুদ্দিন মিয়া, মা সালমা বেগম।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার প্রদান ও স্বরচিতা কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার(২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে ও বুরো বাংলাদেশের সহযোগিতায় টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ঠা ডক্টর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাসানী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাজিম উদ্দিন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের উপদেষ্টা কবি জাকিয়া পারভিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি মাহমুদ কামাল।
অনুষ্ঠানে চারজন কবি-সাহিত্যিককে টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার ও চারজন কবি-সাহিত্যিককে অরণি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, ডা. ইউসুফ খান, শুকুমার বাগচি, তরুণ লেখক মিশুক মঞ্জুর ও হারুণ অর রশীদ।
অরণি সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, ফরিদ আহম্মেদ, চৈতালী চট্রপাধ্যায়( পশ্চিম বঙ্গ), মুনজু রহমান, অলক বিশ্বাস (পশ্চিম বঙ্গ)।
মামুনুর রশিদঃ আমার বাড়ি টাঙ্গাইল হলেও জন্মেছি টাঙ্গাইল থেকে দশ কিলোমিটার দূরে, বলতে গেলে তখনকার এক অজপাড়া গাঁয়ে। জ্ঞান হওয়ার পর কখন টাঙ্গাইল শহরে এসেছি, তা আজ আর মনে পড়ে না। তবে টাঙ্গাইলই আমার প্রথম দেখা শহর, প্রিয় শহর।
সেই ঘ্যাগের দালান, যার নিচতলায় ছিল একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট- নাম নিরালা। যে কারণে বলা হতো নিরালার মোড়। শুনেছিলাম শহরের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এখানে ভাস্কর্য হবে এবং মনোরম কিছু স্থাপনা হবে। এখন শোনা যাচ্ছে, সেই জায়গায় পৌরসভার উদ্যোগে ১৪ তলা শপিং কমপ্লেক্স হবে।
শহরময় সরু পাকা পথ এবং শহরের প্রধান পথটির সমান্তরালে একটি খাল। সারা বছর খালটায় পানি থাকত। গ্রাম থেকে লোকজন নৌকা করে যাওয়া-আসা করত। খালটি দীর্ঘদিন হলো বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় একটা দালান ছিল ঘ্যাগের দালান। সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘আর চিন্তা নাই ঘ্যাগের ওষুধ পাওয়া গেছে’। দালানের দক্ষিণ দিকে কিছু দোকানপাট এবং রাস্তাটি চলে গেছে ছয়আনি বাজারের দিকে। এটাই ছিল তখন একমাত্র বাজার।
সন্ধ্যার পর শহরটি নৈঃশব্দে ভরে যেত। রাস্তার দু’পাশে গন্ধরাজ, কামিনী ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসত। সেই সঙ্গে বাড়িগুলো থেকে হারমোনিয়ামের সঙ্গে গলা সাধার শব্দ পাওয়া যেত। ঘ্যাগের দালান থেকে একটু কাছেই প্রধান সড়কে ছিল করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাবের অফিস, অফিসসংলগ্ন মঞ্চ। মঞ্চটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল সিনেমা হলকে। সিনেমা হলের নাম কালি সিনেমা। এই ছিল পঞ্চাশের দশকের টাঙ্গাইল।
১৯৬৭ সালে টাঙ্গাইল জেলা হয়ে গেল। কলেবর বাড়তে থাকল চারদিকে। নতুন জেলা সদর নির্মিত হলো। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে একটু দূরে, সেইসঙ্গে দোকানপাট বাড়ারও প্রয়োজন দেখা দিল। এর মধ্যেই গড়ে উঠল টাঙ্গাইলের নিউমার্কেট। একটা ছোট্ট জেলা হওয়ার পরও টাঙ্গাইলের একটা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ছিল। রাজনীতি, সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল টাঙ্গাইল অনেক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এই শহরে বসন্ত উৎসব উদযাপন হতো। সেই বসন্ত উৎসবে নাচ-গান ছাড়াও গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যও স্থান পেত।
করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব ছাড়াও বেশ কয়েকটি নাট্যদলও গড়ে উঠেছিল, তারাও নাটক করত এবং টাঙ্গাইলের নাট্যামোদী জনগণের কাছে খুবই ভালোবাসার পাত্র ছিল। এই শহরে সেতার, বেহালা, তবলাসহ উচ্চাঙ্গ সংগীতের বেশ কিছু গায়ক-গায়িকার সমাবেশ ঘটেছিল। আবার দুর্দান্ত সব অভিনয়শিল্পী নাটককে জীবন্ত করে রাখতেন।
এই শহর ছিল আধুনিক কবিদের পীঠস্থান। যেহেতু ঢাকার সঙ্গে ১৯৬২ সাল থেকেই বাস যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল, মাত্র দুই টাকা ভাড়ায় ঢাকায় আসা যেত। কবিরা প্রায়ই টাঙ্গাইলে এসে আনন্দময়ী কেবিনে কবিতার আসর বসিয়ে ঘোষণা করতেন, কবিতাই পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঠেকাতে। সেই রকম একটা আবহের মধ্যে টাঙ্গাইল শহরটি শাড়ি, চমচম এবং মধুপুরের গজারির বন নিয়ে খুব গর্বের সঙ্গে দিন কাটাচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসের সঙ্গে টাঙ্গাইলের লোকজন যুদ্ধ করেছে, কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবীর হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে তাঁর সমর্পিত অস্ত্রকে তুলে নিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর টাঙ্গাইল কখনও উজ্জ্বল, কখনও বিষণ্ণ হয়েছে। সামরিক শাসনের জাঁতাকল টাঙ্গাইলের ওপর দিয়ে গেছে। তবুও টাঙ্গাইল একটা রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বহাল থেকেছে।
এর মধ্যে একটা নতুন সংস্কৃতি টাঙ্গাইলকে গ্রাস করল। সেটি হচ্ছে দোকান সংস্কৃতি। রাস্তার দুই পাশে এবং ফাঁকা জায়গাগুলোতে কোথাও এতটুকু জায়গা নেই। শুধু দোকান আর দোকান। কোথাও এই দোকানগুলো মহিমান্বিত হয়েছে সুপারমার্কেট হিসেবে। দোকানগুলোর পেছনে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ আছে বটে। কিন্তু প্রধান উদ্যোক্তা পৌরসভা প্রথম আঘাত হানে খালটির ওপর। দৃষ্টিনন্দন ও পয়ঃপ্রণালির কাজ করা খালটির ওপর একের পর এক সুপারমার্কেট গড়ে ওঠে। এটি শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর নির্মম আঘাত।
পৌরসভার মেয়র যিনি থাকেন তিনি দোকান করার একটা পরিকল্পনা নিয়ে নামেন। প্রচুর দোকান হয়, সেগুলো বিলি-বণ্টন প্রক্রিয়ায় প্রচুর টাকা-পয়সার লেনদেন হয় এবং মেয়র হিসেবে কেউ বিদায় নিলে অন্য মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আবার নতুন জায়গা খুঁজতে শুরু করেন।
শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়, পৌরসভার অন্যান্য কার্যক্রম থিতিয়ে পড়ে। কিন্তু দোকান সংস্কৃতি সবকিছুকে ছাপিয়ে শহরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে রিকশা শহরের একমাত্র অভ্যন্তরীণ পরিবহন কিন্তু তার জায়গা দখল করে ফেলে চীন থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎচালিত ইজিবাইক। শত শত ইজিবাইক শহরটাকে গ্রাস করে ফেলেছে। এই ইজিবাইকের লাইসেন্সদাতা হচ্ছে পৌরসভা।পৌরসভা রাস্তার ক্ষমতা বিবেচনা না করে একের পর এক ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে থাকে।
একবার এক মেয়র ইজিবাইক চালানোর জন্য সময় ভাগ করে দিয়েছিলেন। সেই সময় ভাগ এখন আর নেই। দোকান সংস্কৃতি শহরটাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে, সেই নিঝুম-নিরালা পাবলিক লাইব্রেরিটি নিচতলা থেকে ওপরের তলায় উঠেছে। নিচে আবারও দোকানপাট।
সেই টিনের ঘরের করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব আর নেই। দালান উঠেছে, সঙ্গে একটি মঞ্চ ও সিনেমা হল ছিল, তা উঠে গিয়ে সেখানেও এসেছে অসংখ্য দোকান।
সেই ঘ্যাগের দালান, যার নিচতলায় ছিল একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট- নাম নিরালা। যে কারণে বলা হতো নিরালার মোড়। শুনেছিলাম শহরের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এখানে ভাস্কর্য হবে এবং মনোরম কিছু স্থাপনা হবে। এখন শোনা যাচ্ছে, সেই জায়গায় পৌরসভার উদ্যোগে ১৪ তলা শপিং কমপ্লেক্স হবে।
নিরালার মোড় থেকে জেলা শহরের দিকে যেতে রাস্তার দু’পাশে আবাসিক গৃহগুলো এখন পৃথিবীর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে পরিণত হয়েছে। শহরে নিশ্চিন্তে আনন্দদায়ক কোনো ভ্রমণ এখন কল্পনা করা যায় না। ইজিবাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার, ট্রাক এসবের ভিড় এত প্রবল যে, কোনো পথই আর পথিকের নেই। নিরালার মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে থানা ও শান্তিকুঞ্জ কাচারিতে যেতেও অসংখ্য দোকান। পশ্চিম দিকে গোরস্তান এবং টাঙ্গাইলের শেষ সীমানা একটা ব্রিজ পর্যন্ত ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার জ্যামে কখনও আটকে থাকতে হয়। পথ সম্প্রসারণেরও কোনো জায়গা নেই বা পৌরসভার পরিকল্পনাও নেই।
প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইল শহরকে সাংস্কৃতিক নগরী বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে কিছু কাজকর্মও করা হয়েছিল। সাংস্কৃতিক নগরী করতে হলে বর্তমানের এই শহর কাঠামোকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে হবে। সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যে পৌরসভার ঔদাসীন্য চরম। একমাত্র জেলা সদরটি এখনও তার লেক, পার্ক ও রাস্তা নিয়ে সুদৃশ্য আছে। কারণ সেখানে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণ নেই। শহরের যতটুকু এলাকা পৌরসভার অধীনে, সেখানেই মেয়র দোকান সংস্কৃতি গড়ে তুলছেন। শহরের প্রধান রাস্তার পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে যে শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন, তা সম্পূর্ণভাবে মেয়রের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এলাকার কাউন্সিলররা অসহায় বোধ করেন।
যেহেতু টাঙ্গাইল রাজনীতি ও সংস্কৃতির একদা পীঠস্থান ছিল এবং বর্তমানেও টাঙ্গাইল নানাভাবে সারাদেশকে আকর্ষণ করে, তাই টাঙ্গাইলের নগরবাসী পৌরসভার কাছ থেকে কিছু ন্যায্য দাবি করতেই পারেন, যার মধ্যে প্রধান শহরকে দোকান সংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচানো এবং শহরের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে শৃঙ্খলা নিয়ে আসা।
আমরা যাঁরা টাঙ্গাইলকে সংস্কৃতির নগর হিসেবে স্বপ্ন দেখেছি, তাঁদের কাছে টাঙ্গাইল যেন একটি দুঃস্বপ্নের নগরীতে পরিণত না হয়।
লেখকঃ মামুনুর রশীদ ,বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও টাঙ্গাইলের কৃতি সন্তান
লেখাটি “সমকাল” অনলাইন থেকে নেওয়া…
একতার কন্ঠ:“টাঙ্গাইলের সংবাদপত্র ও সম্পাদক” নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। শনিবার (১১ জুন) সকালে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে দৈনিক যুগধারা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সরকার হাবিব সম্পাদিত “টাঙ্গাইলের সংবাদপত্র ও সম্পাদক” নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন একুশে পদক প্রাপ্ত টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক।
অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক মজলুমের কন্ঠের সম্পাদক এডভোকেট জাফর আহমেদ, কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ার মোল্যা, টাঙ্গাইল জজকোর্টের পিপি এস আকবর খান, প্রথম আলো পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক কামনাশীষ শেখর, এনটিভির টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মহব্বত হোসেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাগরপুর উপজেলা কমান্ড মোঃ সুজায়েত হোসেন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই এর পরিচালক আবু নাসের। আব্দুর রৌফ রিপনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশ,গ্রন্থে বাংলাদেশের পত্রিকা ও সম্পাদকের নানা বিষয় বিশ্লেষণধর্মী লেখা স্থান পেয়েছে। বইটি সম্পাদক ও সংবাদপত্রের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
একতার কণ্ঠঃ নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষা ও বইয়ের মহত্ব তুলে ধরতে টাঙ্গাইলের সখীপুর শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী একুশে বইমেলা। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ডাকবাংলো চত্বরে এ মেলারে উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম। ‘দ্বিতীয় সূর্য’ নামের একটি সংগঠন এ মেলার আয়োজন করেছে।
মেলায় ১২টি স্টল স্থান পেয়েছে।
অধ্যাপক আলীম মাহমুদের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার হায়দার, পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সুলতানা, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার প্রমুখ।
একতার কণ্ঠঃ দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন, শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইলে ২১ শে ফেব্রুয়ারী (সোমবার) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস পালিত হয়েছে।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২ টা ১ মিনিটে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে শহীদদের স্মরণে এক মিনিটের নিরবতা পালন করা হয়৷
এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক,সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আতাউল গণি, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম, সিভিল সার্জন আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর পর জেলা পরিষদ, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভা, প্রেসক্লাব, সিভিল সার্জন অফিস, পিবিআই, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনসাধারন শহীদদের স্মরণে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
এর আগে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের দেশাত্ববোধক গানের অনুষ্ঠান। এছাড়াও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।