/ হোম / ফিচার
টাঙ্গাইলে স্রোতে ভেঙে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক; জন ভোগান্তি চরমে - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে স্রোতে ভেঙে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক; জন ভোগান্তি চরমে

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে পানির স্রোতে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ১০ গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলার সিলিমপুরে এলেংজান‌ী সেতুর এক পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়।

এদিকে, সেতুর এক পাশ ভেঙে যাওয়ায় বিকল্প সড়ক না থাকায় স্থানীয় ডিঙি নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বন্যার শুরুতে সেতুর আশপাশে নদী ভাঙন দেখা দেয়। সে সময় সেতুর কিছু অংশ ভেঙে গেলেও সংযোগ সড়ক ব‌্যবহার করে চলাচলে তেমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। তবে পুনরায় নদীর পানি কমতে শুরু করায় আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এলেংজান‌ী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর একপাশের সংযোগ ভেঙে চলাচল বন্ধ হয়েছে। এতে আশপাশের প্রায় ১০ গ্রামসহ চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় সিলিমপুর স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র তাইজুল জানান, সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় তাদের বিদ্যালয় যাতায়াতের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পার হয়ে বিদ্যালয় যেতে হচ্ছে। অন্তত সংযোগ সড়কটিতে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।

মাইঠান ও দেউলি গ্রামের হাবিব, হাফিজুল, সবুজ জানান , নদীতে পানি বাড়ার সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় কোনো ব‌্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

উপজেলার দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম‌্যান তাহমিনা আকতার বলেন, ভেঙে যাওয়া সেতু দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সেতুর এক পাশের সড়ক ভেঙে গেছে।

দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মারুফ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যত দ্রুত সম্ভব সেতুটির সংযোগ সড়কটি জিও ব্যাগ ফেলে চলাচলের উপযোগী করা হোক.। উপজেলা পরিষদ থেকে গত দুই বছর মৌখিকভাবে বাব বার জানানোর পরও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনগণের আজকের এই দুর্ভোগ।

সর্বশেষ আপডেটঃ ২৪. জুলাই ২০২২ ০৯:৪০:পিএম ২ বছর আগে
প্রেমে পড়েছেন, বুঝবেন কিভাবে? - Ekotar Kantho

প্রেমে পড়েছেন, বুঝবেন কিভাবে?

‌একতার কন্ঠ: অনেক  সময় এমন হয় যে কাউকে ভালোবেসে ফেলেছেন নাকি শুধুই বন্ধুত্বের টান বা পছন্দ, সেটা নিয়ে দ্বিধার সৃষ্টি হয়। নিজের মনে এই দ্বিধার কারণে সেই মানুষটিকে ভালোবাসার কথা জানাতেও সাহস হয়ে ওঠে না। অনেক সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া কোনো ছেলে বা মেয়েকে দেখে প্রথম দর্শনেই ভালোবেসে ফেলা যায়। যাকে বলে প্রথম দেখায় প্রেম। আবার অনেক দিনের চেনা জানা বন্ধুর প্রতিও হঠাৎ ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। একজনকে ভালো লাগার পর নিজের মনে শুধুই প্রশ্ন জাগে, এই অনুভূতি কি শুধুই ভালো লাগা, নাকি ভালোবাসা।

কিভাবে বুঝবেন আপনি প্রেমে পড়েছেন-

. ‘বাটারফ্লাইস ইন স্টোমাক’ : প্রেমে পড়লে ছেলে-মেয়ে সবারই শরীরের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। যাকে ভালোবেসে ফেলেছেন তাকে দেখলে পেটে ও বুকের ভেতর এক অদ্ভুত চাপ অনুভূত হয়। তার সাথে কথা বলার সময় কিংবা তাকে ফোন করার আগে প্রচণ্ড আবেগের একটি অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতিকেই ইংরেজিতে বলা হয় ‘বাটারফ্লাইস ইন স্টোমাক’ বা পাকস্থলীতে প্রজাপতি। এই অনুভূতির কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, নার্ভাস হয়ে যাওয়ার কারণে শরীর থেকে একটি বিশেষ হরমোন নিঃসৃত হয়। আর এই হরমোনের কারণে পাকস্থলীর এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

২. হঠাৎ আনন্দের অনুভূতি: প্রেমে পড়লে মনের স্থিরতা থাকে না। হঠাৎ করেই মন ভালো হয়ে যায় এই সময়ে। বাঁধভাঙ্গা সেই হাসির অনুভূতিতে আপনি হয়তো নিজেও জানবেন না আপনি আনমনে হাসছেন। প্রিয় মানুষটির কথা মনে পড়লেই নিজের অজান্তেই আপনার মুখে হাসি ফুটে উঠবে। এই সময়ে নিজের ভেতরে একটি অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তখন আপনার কাছে সবকিছুই ভালো লাগবে।

. সহজেই মন খারাপ: প্রেমে পড়লে হঠাৎ করেই মন ভালো হওয়ার মতোই সহজেই মন খারাপ হয়ে যায়। পছন্দের মানুষটি ফোন না ধরলে কিংবা তার সাথে দেখা না হলে মনের ভেতর খারাপ লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একটুখানি দূরত্বকেই তখন অবহেলা মনে হতে থাকে।

৪. সারাক্ষণ একজনকে নিয়েই ভাবা: কিছুটা দিবাস্বপ্ন দেখার মতোই পরিস্থিতি হয় প্রেমে পড়লে, চিন্তা ভাবনা সারাক্ষণ একজনকে ঘিরেই ঘুরপাক খায়। যাকে পছন্দ, আপনার মন কিছুতেই যেন তার কথা ভুলতে পারে না।

৫. শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করা: যার প্রেমে পরেছেন তার প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই শারীরিক আকর্ষণ বোধ করবেন আপনি। আর এ কারণেই তার সান্নিধ্য উপভোগ করবেন। তার পাশে বসা, হাতের একটু খানি ছোঁয়া কিংবা সামান্য ধাক্কাতেও শিহরিত হয়ে ওঠাই তখন স্বাভাবিক।

৬. হারিয়ে ফেলার ভয়: প্রেমে পড়লে প্রতিমুহূর্তে আপনার প্রিয় ব্যক্তিটিকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাবেন। সর্বক্ষণ আপনার মনে এই সংশয় ঘুরপাক খাবে। আপনি এমন কিছু করবেন না বা চাইবেন না মানুষটি এমন কিছু করুক, যাতে আপনি তাকে হারিয়ে ফেলেন। এই হারানোর ভয় যদি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে সত্যি সত্যি আপনি প্রেমে পড়েছেন।

৭. মনের কথা একজনকেই বলতে ইচ্ছা হয়: এ কথা সত্য যে, সব কথা সবাইকে বলা যায় না। কিন্তু কেউ কি আছে, যার সঙ্গে আপনি নির্দ্বিধায় সব কথা বলতে পারছেন। আপনি দেখবেন, কোনো প্রকার জড়তা ছাড়াই কোনো একজনের সঙ্গে গোপন বা মনে লুকানো কথাগুলো বলতে পারছেন। আপনি আপনার কাজে তার সাহায্য আশা করবেন আর চাইবেন এই মুহূর্তে আপনার করণীয় কী হতে পারে, তা-ও বলে দেবে আপনার প্রিয় এই মানুষটি।

এ লক্ষণগুলোর সাথে যদি আপনার মিলে যায় তাহলে আর কিছুই নয়, প্রেমে পড়েছেন আপনি। ধীরে সুস্থে ভালবাসার মানুষটিকে জানান মনের কথা। তবে প্রেমে পড়ার শুরুর দিকে একটা দোটনা থাকা খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। মনের মধ্যে বারবার একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়, আমি যাকে ভালোবাসি সেও কি আমাকে ভালোবাসে?

এবার তাহলে জেনে নিন সে-ও আপনাকে ভালবাসে কি না-

১. আপনার শত্রু মানে তারও শত্রু। যখন দেখবেন কোনো কারণ ছাড়াই আপনার পছন্দের মানুষটি আপনার শত্রুকে নিজেরও শত্রু ভাবতে শুরু করেছে, শুধু আপনি তাকে পছন্দ করেন না বলে সেও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে, তখন বুঝবেন সে-ও আপনার প্রেমে পড়েছে।

২. খুব সাধারণ বিষয়েও সে আপনার প্রতি তার আবেগ প্রকাশ করবে, যাতে আপনি বুঝতে পারেন আপনার প্রতি সে কতটা দুর্বল।

৩. আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনো সুযোগই সে হাতছাড়া করতে চায় না। যত ঝামেলাই থাকুক না কেন ঠিক সে কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করে।

৪. যেকোনো সমস্যার কথা সবার আগে আপনাকে বলার চেষ্টা করে। হয়তো আপনি কোনো সমাধানই দিতে পারেন না, তবুও সে আপনাকে বলে শান্তি পায়।

৫. কেমন জীবনসঙ্গী চায় সেই বিষয়গুলো যদি বারবারই আপনাকে বলে এবং আপনার কাছ থেকে কোনো উত্তর আশা করে, তাহলে বুঝবেন সে আপনাকে বোঝাতে চাচ্ছে যে, তার আপনার মতোই সঙ্গী প্রয়োজন।

৬. আপনি অনেক আনন্দে থাকলেও সে বুঝতে পারে, আবার খুব কষ্টে থাকলেও সে বুঝতে পারে। আপনার সব আচরণ সে যখন আয়ত্ব করে ফেলছে, আর আপনিও তার কাছে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারছেন না, বুঝবেন সে প্রেমে পড়েছে।

৭. সে আপনার সম্বন্ধে সবই জানে। আপনার কী ভালো লাগে, কী অপছন্দ, কোন খাবার পছন্দ, কিসে বিরক্ত হন সবই সে জানে। এটাই তার প্রেমে পড়ার অনেক বড় একটা লক্ষণ।

৮. তার কাছে আপনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো বিষয় নেই। আপনি যখন কথা বলতে আসেন তখন আপনার কথাকে বেশ মূল্যায়ন দিয়েই সে শোনে।

৯. ভালোলাগার মানুষটিকে অকারণে ফোন করতে ইচ্ছা করে। আর যদি দেখেন আপনার পছন্দের মানুষটি আপনাকে অকারণেই ফোন করে তাহলে বুঝবেন সে আপনার প্রতিই আকর্ষিত হচ্ছে।

সংগৃহীত

সর্বশেষ আপডেটঃ ১৯. জুন ২০২২ ০৬:৪৫:পিএম ৩ বছর আগে
টাঙ্গাইলে দখল ও দূষনে মৃত প্রায় লৌহজং নদী - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে দখল ও দূষনে মৃত প্রায় লৌহজং নদী

একতার কণ্ঠঃ এক কালের খরস্রোতা লৌহজং নদী এখন মৃতপ্রায়। পলি জমার পাশাপাশি পানির অভাবে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও নাব্যতা হারিয়ে গেছে।এমন বৈরী পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ দখল ও শহরের ফেলা বর্জ্য । মারাত্মক দূষণ বর্তমানে এই নদীটিকে মরা নোংরা খালে পরিণত করেছে। এসবই ঘটেছে মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাশিনগর এলাকায় ধলেশ্বরী থেকে উৎপত্তি হয়ে ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লৌহজং নদী জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে গিয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লৌহজং নদীর উৎসমুখ বালিতে ভরাট হয়ে গেছে। যোগিনী সুইস গেট এলাকাসহ নদীর অধিকাংশ স্থানই প্রায় পানিশূন্য। শহর এলাকায় নর্দমার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীটি। দিনের পর দিন ফেলা নোংরা আবর্জনার গন্ধে টেকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে নদীপারের বাসিন্দাদের।


শহরের বেশ কয়েকজন প্রবীণ জানান, টাঙ্গাইল শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে এই নদী ।১৯৮০-র দশক পর্যন্ত এই নদীতে লঞ্চ ও পণ্যবোঝাই বড় বড় নৌকা চলাচল করেছে। নদীপথে রাজশাহী থেকে আম বোঝাই নৌকা এসে শহরে ভিড়তো। এ জন্য শহরের কলেজ পাড়ার একটি সড়কের নাম করন হয়েছে “আমঘাট রোড”। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে লৌহজং নদীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।ঢাকা এবং আশেপাশের জেলাগুলো থেকে খুব সহজে এ নদীর মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা শহরে প্রবেশ করা যেত। যার ফলে যাত্রী পরিবহন এবং মালামাল স্থানান্তরে আরামদায়ক পথ ছিল এ নদী। অর্থনৈতিক ও সামজিক উন্নয়নে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল।

উজানে যমুনা ও এর শাখা ধলেশ্বরীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে লৌহজংয়ের প্রবাহেও। নাব্যতা হারাতে থাকে নদীটি। বন্ধ হয়ে যেতে থাকে বড় বড় নৌকার চলাচল।

আরো পড়ুনঃ টাঙ্গাইলে ট্রাক চাপায় যুবক নিহত

পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা কর্ম পরিকল্পনার (ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান/ ফ্যাপ-২০) অধীনে ১৯৯১ সালে সদর উপজেলার যোগিনীতে লৌহজং ও ধলেশ্বরীর সঙ্গমস্থলের কাছে সুইস গেট নির্মাণ করায় মরে যেতে শুরু করে নদীটি।পরে নদীর তীর দ্রুত দখল হয়ে যেতে শুরু করে। শুরু হয় বাড়ী-ঘর নির্মাণ ও ধান ও সবজি চাষ।

পাশাপাশি,পৌর এলাকার বসতবাড়ী থেকে নির্গত ময়লা পানি ও আবর্জনা, বিসিক শিল্প এলাকার কয়েকটি কারখানা ও সদর উপজেলার ক্ষুদিরামপুরে টেক্সটাইল মিল থেকে নির্গত বর্জ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নদীটিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করতে থাকে। লৌহজংয়ের পানি মানুষ ও গবাদি পশুর ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পরে। এই নদীতে থাকা জলজ প্রানী বিলুপ্তর মুখে পরে।তা ছাড়া, দূষিত পানির দুর্গন্ধে নদীর ধারে মানুষের বসবাস কঠিন হয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বছরের পর বছর ধরে সংশ্লিষ্ট নাগরিক ও স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরা নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনাসহ দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে নানান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসন মোট ৭৬ কিলোমিটার নদীর মধ্যে পৌর এলাকার হাজরা ঘাট থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকার নদীর জায়গা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।

প্রাথমিক ভাবে কিছু অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হলেও পরে অজ্ঞাত কারনে উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রয়ারী তৎকালীন জেলা প্রশাসন একইস্থানে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।

সেসময় শুধু সদর উপজেলাতেই সাড়ে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে পৌর এলাকায় নদীর তীরে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।

কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলার পর, নদীর সীমানা নির্ধারণ ও দখলদারদের চিহ্নিত করা নিয়ে বির্তকের মুখে পরে এই অভিযানটিও স্থগিত করা হয়।

পৌর এলাকার স্টেডিয়াম সংলগ্ন নদীপাড়ের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার নদীটি খনন করতে চাচ্ছে, পরিবেশ সুন্দর করতে চাচ্ছে এর সঙ্গে আমরা একমত। কথা হলো, ১৯৬২ সালে জমিগুলো আমাদের নামে রেকর্ড করে দেওয়ায় ডিসি অফিস খারিজ দিয়েছে, ভূমি অফিস খাজনা নিয়েছে ও পৌরসভা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার অনুমোদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঘর করেছি।’

‘এখন যদি এই জমি থেকে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয় তবে আমাদের জমির ন্যায্য মূল্য দিতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘নদীর জমি দখলের পাশাপাশি সেখানে এখনও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।শহরের প্রধান কাঁচাবাজার পার্ক বাজারের সব বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হচ্ছে।

কবি ও গীতিকার মাসুম ফেরদৌস বলেন, ‘কয়েক বছর আগে স্থানীয় প্রশাসন অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নদীর ৭৬ কিলোমিটারের মধ্যে পৌর এলাকার মাত্র দেড় কিলোমিটার দখল ও দূষণমুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। নদীতে যদি পানিই না থাকে তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এর পাড় বাঁধাই বা অন্য কার্যক্রম করে লাভ নেই। নদীর প্রান হচ্ছে পানি।’
আমরা চাই, দখল-দূষণ মুক্ত করার পাশাপাশি উৎসমুখ থেকে পুরো নদীতে কিভাবে প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হোক।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইলের বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘দখল-দূষণে লৌহজং মৃতপ্রায় আজ । শুধু দেড় বা ৩ কিলোমিটার উদ্ধার করে নদীর পাড়ে রাস্তা বা অন্য কিছু নির্মাণ করে কাজের কাজ কিছু হবে না। মানুষ নদী সৃষ্টি করতে পারে না। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ। নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, দেশ বাঁচবে। কাজেই নদীটিকে সচল করতে হবে।’

‘নদীর উৎস মুখ থেকে প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘নদীকে নদীর গতিতে চলতে দিতে হবে। এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।’

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম জানান, ‘নদীটির বেহাল দশা দেখেছি। যে অংশটুকুতে অভিযান চালানো হয়েছিল তা আবার দখলের প্রক্রিয়া চলছে।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ডক্টর মো. আতাউল গণি জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদকঃ মো. আরমান কবীর সৈকত

সর্বশেষ আপডেটঃ ৩০. মার্চ ২০২২ ০৬:০৮:পিএম ৩ বছর আগে
পাথরাইলের বান্দাবাড়ীঃ যেন ভিন গ্রহের এক গ্রাম - Ekotar Kantho

পাথরাইলের বান্দাবাড়ীঃ যেন ভিন গ্রহের এক গ্রাম

একতার কণ্ঠঃ  টাঙ্গাইল সদর থেকে দক্ষিনে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান । টাঙ্গাইল-নাগরপুর-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়কের ভুরভুরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৫ শত মিটার দূরে অবস্থিত গ্রামটির নাম বান্দাবাড়ী। গ্রামের মাঝ দিয়ে চলে গেছে গ্রামবাসির এক মাত্র চলাচলের কাঁচা রাস্তাটি। গ্রামের ১১০টি ঘরের ৪১৩ জন লোকের চলাচলের রাস্তাও এটি। নেই কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়, গ্রামীন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।গ্রামের শিশু-কিশোরদের খেলার কোন মাঠ পর্যন্ত নেই। বিগত দুই যুগে গ্রামে কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেনি । ২০২২ সালে এসেও মনে হয় দুই যুগ আগের বাংলার কোন গ্রাম যেন এটি।

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের এই গ্রামটির নাম ইউনিয়ন পরিষদ বোর্ডে লেখা আছে বান্দাবাড়ী। কেবল লেখা পর্যন্তই অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে এই গ্রামের।নির্বাচন আসে,নির্বাচন যায়। সরকার আসে, সরকার যায়।বান্দাবাড়ী গ্রামবাসীদের আজো কাঁচা রাস্তায় চলাচল করতে হয়।গ্রামের শিশুদের পড়ালেখা করতে পাশের ইউনিয়ন আটিয়ার গমজানী প্রাথমিক বিদ্যালয় না হলে ভুরভুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়। পাশের ইউনিয়নের গ্রাম গুলোর রাস্তা-ঘাটের অনেক উন্নয়ন হলেও,উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রাম। বান্দাবাড়ী গ্রামবাসীদের কেবল মিলেছে প্রতিশুতি পর প্রতিশুতি।নিজ ইউনিয়নে পরবাসী যেন বান্দাবাড়ী গ্রাম।

গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা মোঃ গঞ্জের আলী বলেন, গ্রামের এক মাত্র কাঁচা রাস্তাটির সর্বশেষ উন্নয়ন হযেছিল ১৯৮৬ সালে। তৎকালিন চেয়ারম্যান মোঃ আয়াত আলী খান বর্তমান চলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি করে দিয়েছিলেন। তার পর আর কোন উন্নয়ন দেখেনি বান্দাবাড়ী গ্রামের লোক জন।

তিনি আরো বলেন, তার জীবদ্দশায় আর গ্রামের কাঁচা রাস্তাটির উন্নয়ন দেখে যেতে পারবে কিনা তার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।পাথরাইল ইউনিয়নের দক্ষিন-পশ্চিম সর্বশেষ অংশে গ্রামটির অবস্থান হওয়ায় নির্বাচন ব্যতিত কোন জন প্রতিনিধি গ্রামে আসে না। তিনি এখন আর কোন জনপ্রতিনিধিকে গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে অনুরোধ করেন না।

Ekotar kantho

একই গ্রামের গৃহবধু ছালমা বেগম বলেন, তার এই গ্রামে বিবাহ হয়েছে প্রায় ১৪ বছর হল। নববধূ হিসেবে গ্রামে এসে যে অবস্থা দেখেছেন, আজ ১৪ বছর পর একই অবস্থা দেখছেন বান্দাবাড়ী গ্রামের।বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে এই গ্রামে কেও আসতে চায় না। সে সময় কোন রুগিকে গ্রামের এই রাস্তা দিয়ে বহন করে শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে।

এই গ্রামের তরুন যুবক মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, গ্রামের উন্নয়নে কোন চেয়ারম্যান কিম্বা মেম্বার এখন পর্যন্ত নজর দেয়নি। এমনকি স্থানীয় সাংসদ এই গ্রামের কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করেনি। বান্দাবাড়ী গ্রাম যেন ভিন গ্রহের কোন গ্রাম।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার মোঃ আবুল কাশেম বলেন, তিনি সদ্য নির্বাচিত। তবে তিনি বান্দাবাড়ী গ্রাম ও রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা শুনেছেন। গ্রামটি ইউনিয়ন হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দীর্ঘ দিন হল উন্নয়ন বঞ্চিত।তিনি চেষ্টা করবেন যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাঘাট সহ গ্রামের উন্নয়ন করার।

Ekotar Kantho

পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ সরকার জানান, গ্রামটি আসলেই উন্নয়ন বঞ্চিত।দীর্ঘদিন হল গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তার কোন উন্নয়ন হয়নি।বর্ষা কালে এই গ্রামের মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে।

তিনি আরো জানান, তিনি চেয়ারম্যান হয়েই বান্দাবাড়ী গ্রামের রাস্তা পাঁকা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। ইতোমধ্যে গ্রামের ১ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটির স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়(এলজিইডি) বিভাগ থেকে মাপ-ঝোক করে নিয়ে গেছে। আশা, করি খুব দ্রুতই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া বান্দাবাড়ী গ্রামের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১২. জানুয়ারী ২০২২ ০৪:০০:পিএম ৩ বছর আগে
টাঙ্গাইলে “আটিয়া” যেন এক পাঙ্গাসের গ্রাম - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে “আটিয়া” যেন এক পাঙ্গাসের গ্রাম

একতার কণ্ঠঃ বাড়ি-বাড়ি পুকুর। পুকুর ভরা পাঙ্গাস মাছ। ঘরে-ঘরে পাঙ্গাস চাষী। পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের প্রায় সবাই এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। পুকুরের মাটি ও পানির গুনগত মান এবং পুষ্টিকর খাবারে উৎপাদিত পাঙ্গাস প্রচলিত জাতের হলেও স্বাদে অতুলনীয়। ফলে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ সাফল্য জমিদারী আমলের আটিয়া পরগনার ‘আটিয়া’- বর্তমানে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া গ্রামের।

আটিয়া গ্রামেই অবস্থিত সুফী সাধক শাহান শাহ আদম কাশ্মিরীর মাজার শরীফ। মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রায় ৪’শ বছরের পুরনো মসজিদটি এখন প্রত্নতান্তিক সম্পদ। ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে দেশীয় মুদ্রা সংস্করণে দশ টাকার নোটের প্রচ্ছদে স্থান পাওয়ায় আটিয়ার পরিচিতি দেশব্যাপী। বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকদের আনাগোনাও রয়েছে।

আটিয়া গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এ গ্রামের প্রায় সবাই এখন পাঙ্গাস চাষে স্বপ্ন পুরণে ব্যস্ত। স্থানীয় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আমিষের চাহিদা পুরণ করছে আটিয়ার পাঙ্গাস। মসজিদটির কারণে বিখ্যাত হওয়া আটিয়া গ্রামের জীবন-যাত্রায় এবার যোগ হয়েছে পাঙ্গাস চাষ। পাঙ্গাসের গ্রাম নামে নতুন পরিচয় পাচ্ছে ‘আটিয়া’। সুস্বাদু পাঙ্গাসের কারণে আটিয়া গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে।

সরেজমিনে জানাগেছে, ১৯৯৪ সালে ওই গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক ব্যক্তি প্রথম আটিয়াতে পাঙ্গাস মাছ চাষ শুরু করেন। আসাদুজ্জামান আসাদের কঠোর পরিশ্রম ও পুকুরের পানির গুণে পাঙ্গাসের ভালো ফলনে তিনি লাভবান হন। আসাদের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে আটিয়ার যুবকরা পাঙ্গাস চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এখন আটিয়ার ঘরে-ঘরে পাঙ্গাস চাষী। এই গ্রামে দেড় শতাধিক পুকুরে এখন পাঙ্গাস চাষ হচ্ছে। পোনা মজুদ, পাঙ্গাস চাষ, মাছ ধরা, এমনকি বাজারে বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রায় সবাই এখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঙ্গাস চাষের সাথে যুক্ত। প্রায় দুই যুগের পাঙ্গাস চাষের ইতিহাসে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। তবে গত কয়েক বছরে ধাপে-ধাপে খাবারের দাম বেড়ে দ্বিগুন হওয়ায় পাঙ্গাস চাষের আগামি দিনগুলো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ন্বপ্নের পাঙ্গাস চাষকে সহজতর করতে খাবারের দাম কমানো, মাছ সরবরহের ব্যবস্থাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছে পাঙ্গাসের গ্রাম আটিয়ার চাষীরা।

প্রতিষ্ঠিত পাঙ্গাস চাষী আসাদুজ্জামান আসাদের এখন চারটি পুকুর। দুটিতে ৩০ হাজার পাঙ্গাস চাষ করেন। বাকি দুইটি পুকুরে পাঙ্গাসের পোনা মজুদ রাখেন। তিনি জানান, নব্বইয়ের দশকে আটিয়ায় তিনিই প্রথম পাঙ্গাস চাষ শুরু করেন। গ্রামে এখন দেড় শতাধিক পুকুরে পাঙ্গাস চাষ হচ্ছে। তিনি অভিযোগের সুরে জানান, বর্তমানে পাঙ্গাসের খাবারের দাম দ্বিগুন। ৭-৮ শ’ টাকা মূল্যের খাবারের বস্তা হয়েছে ১৭-১৮শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সে তুলনায় মাছের দাম বাড়েনি, আগের দামেই পাঙ্গাস বিক্রি করতে হচ্ছে। পাঙ্গাস চাষে জেলা-উপজেলায় দুইবার সেরা চাষীর পুরস্কার পেলেও বর্তমানে পাঙ্গাস চাষ নিয়ে হতাশায় রয়েছেন তিনি। আসাদের পর ১৯৯৯ সালে পাঙ্গাস চাষ শুরু করেন বায়েজিদ হোসেন জুয়েল। তার চারটি পুকুরে ১৫ থেকে ২০ হাজার পাঙ্গাস চাষ করেছেন তিনি। জুয়েলও পাঙ্গাস চাষে খাবারের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ৩২-৩৪ টাকা কেজির খাবার দাম বেড়ে ৫২-৫৩ টাকা কেজি। প্রতি কেজিতে ২০-২২টাকা মূল্য বেড়েছে।

আটিয়ার ডা. লুৎফর রহমান ও জায়েদুর রহমানরা সাত ভাই মিলে ৬টি পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করেছেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডা. লুৎফর রহমান বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। খাবারের সব ধরনের কাঁচামাল কিনে কারখানা থেকে ভাঙিয়ে এনে পুকুরে দেন। ফলে মাছের খাবারের উর্ধ্বগতিতেও লাভের হিসাব আগের মতোই গুনছেন তিনি। স্থানীয় কেউ কেউ ডা. লুৎফর রহমানকে অনুসরণ করছেন আবার কেউ কেউ বাড়িতে খাবার তৈরি করতে ছোট আকারের মেশিন কিনে বাড়িতে বসিয়ে খাবার তৈরি করছেন। এতে তাদের পাঙ্গাসের খাবারের খরচ আরও কমে এসেছে।

স্থানীয় খায়রুল হোসেন বাচ্চুও চারটি পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে পাঙ্গাস চাষ করে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনলেও বর্তমানে খাবারে দাম বেড়ে যাওয়ায় হোঁচট খাচ্ছেন তিনিও। স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবা নারী ঝরনাও শুরু করেন পাঙ্গাস চাষ। বেঁচে থাকা অবস্থায় স্বামীর কাছ খেকে শিখেছিলেন কিভাবে পাঙ্গাস চাষ করতে হয়। মাছ চাষ করেই দুই মেয়ের বিয়ের খরচ যুগিয়েছেন তিনি। বাকি দুজনের ভরণ-পোষণের জন্য মাছ চাষ ছাড়েননি তিনি। ঝরনার মতো গ্রামের অনেকেই পাঙ্গাস চাষে ঝুঁকছেন। ফলে আটিয়া গ্রামে বেকারত্ব নেই বলেই চলে। সবাই এখন স্বাবলম্বী।

আটিয়া গ্রামের চাষীরা প্রতি হাজার পাঙ্গাস চাষ করে বছরে ২৫-৩০ হাজার টাকা উপার্জন করছে। একজন চাষী ২৫ থেকে ৩৫ হাজার পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে। একদিকে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদিকে গ্রামের অর্থনীতিকে মজবুত করেছেন। মাছের বর্তমান পাইকারী বিক্রি মূল্য মন প্রতি চার থেকে চার হাজার ২০০টাকা। পাঙ্গাস চাষে খাবারের দাম দফায়-দফায় বেড়ে দ্বিগুন হলেও মাছের পাইকারী দাম কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যেই রয়েছে। সম্প্রতি পাঙ্গাস চাষীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। খাবারের দাম না কমলে পাঙ্গাস চাষ থেকে অনেক চাষী ছিটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল ইসলাম মল্লিক জানান, আটিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এ গ্রামের মানুষ মূলত কৃষি কাজের উপরই নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে পাঙ্গাস চাষে সাফল্য পাওয়ায় বেশিরভাগ মানুষই পাঙ্গাস চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি আরও জানান, জেলার অন্যান্য এলাকায় চাষ করা পাঙ্গাসের তুলনায় আটিয়ার পাঙ্গাস স্বাদের ভিন্নতায় অতুলনীয়। তাই এ এলাকার পাঙ্গাসের চাহিদাও বেশি।

টাঙ্গাইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, দেলদুয়ারের আটিয়ার পাঙ্গাস প্রসিদ্ধ। পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা সাধ্যমতো পাঙ্গাস চাষীদের সহযোগিতা করছেন। জেলা-উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে মাছ চাষীদের পাশে রয়েছেন।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০. ডিসেম্বর ২০২১ ০১:১২:এএম ৩ বছর আগে
মধুপুর বনের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে বন বিভাগের নানা উদ্যোগ - Ekotar Kantho

মধুপুর বনের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে বন বিভাগের নানা উদ্যোগ

 

একতার কণ্ঠঃ মধুপুরে বনের হারানো ঐতিহ্য ফিরাতে শাল বনের সাথে মানান সই দেশী প্রজাতির বৃক্ষ রোপন কার্যক্রম শুরু করেছে বন বিভাগ। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর খাদ্যের সংস্থান, নিরাপদ আবাস্থল টেকসই বনের জন্য বেত ও ভেষজ বৃক্ষের সমন্বয়ে বাগান করা হচ্ছে। টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের এ বনায়ন কার্যক্রমে মধুপুর শাল বনের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুরের দোখলা রেঞ্জের অরণখোলা মৌজায় সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে ১শ হেক্টর দেশী নানা প্রজাতির ফলজ ও ৫০ হেক্টর বেত বাগান করা হয়েছে। জবর দখল রোধ, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান, নিরাপদ আবাস্থল, বনের মধ্যে বেড়া হিসেবে বেত রোপন ও ভেষজ গাছের সমন্বয়ে এ বাগান করা হয়েছে।বনের ঐতিহ্য ফিরাতে ও পশু খাদ্যের জন্য দেশী প্রজাতির লটকন, ঢেউয়া, জলপাই, গোলাপজাম, তিতিজাম, ঢাকিজাম, কালোজাম, আমলকি, কাঠ বাদাম, তেঁতুল, চাপালিশ, বহেড়া, পেয়ারা, গাদিলা, নেওউর, গাব, আতাফল, জামরুল ও চালতা সহ নানা প্রজাতির ফলজের ১শ হেক্টর বাগান করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে সৃজিত বাগানে ফুল-ফল আসতে শুরু হয়েছে। ফুল ও ফলে বাগান সমৃদ্ধ হলে বন্য প্রাণীদের খাদ্যের সংস্থান হবে। এই বনের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে। বন রক্ষার পাশাপাশি জবর দখল রোধ হয়ে ফিরে আসবে মধুপুর শাল বনের হারানো ঐতিহ্য ।

সম্প্রতি টাঙ্গাইলে জেলা প্রশাসক ড. মো.আতাউল গনি, টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো.জহিরুল হক, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমীন সুফল প্রকল্পের এ বাগান পরিদর্শন করেন।এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

দোখলা রেঞ্জকর্মকর্তা আব্দুল আহাদ জানান, সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে দোখলা রেঞ্জে ১শ হেক্টর ফলজ ও ৫০ হেক্টর বেত বাগান সৃজন করা হয়েছে।জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পশুখাদ্য ও নিরাপদ আবাস স্থলের জন্য দেশী প্রজাতির বহেড়া, আমলকি, কাঠবাদাম, জাম চালতা সহ আরো ২৫-৩০ প্রজাতির ফলজ বাগান করা হয়েছে। শাল বনের জীবন্ত বেড়া হিসেবে বেত বাগান করা হয়েছে। বাগানে ফুল-ফল ধরা শুরু হয়েছে।এ বাগান সমৃদ্ধ হলে মধুপুর বন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে তার ধারনা।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১৬. সেপ্টেম্বর ২০২১ ০২:১৩:এএম ৩ বছর আগে
সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র ‘গলুই’: শুটিং এ টাঙ্গাইলে আসছেন শাকিব খান - Ekotar Kantho

সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র ‘গলুই’: শুটিং এ টাঙ্গাইলে আসছেন শাকিব খান

একতার কণ্ঠঃ কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছে প্রথমবারের মতো অনুদানের সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান। খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত শাকিব খানের অনুদানের সিনেমা ‘গলুই’ পরিচালনা করছেন এস এ হক অলিক। সম্প্রতি জানা গেছে সিনেমাটি নিয়ে নতুন খবর। প্রকাশিত খবরে প্রকাশ যমুনার চর থেকে শুরু হচ্ছে শাকিব খানের অনুদানের সিনেমা ‘গলুই’ এর দৃশ্যধারনের কাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো শাকিব খানের নায়িকা হয়ে পর্দায় আসছেন পূজা চেরী।

জানা গেছে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শাকিব খানের অনুদানের সিনেমা ‘গলুই’ এর দৃশ্যধারনের কাজ। ম্যাসব্যাপী সিনেমাটির দৃশ্যধারন হবে  টাঙ্গাইল ও জামালপুরের বিভিন্ন লোকেশনে। প্রথম দিন জামালপুরের যমুনার চর এলাকায় শুরু হবে দৃশ্যধারন। আর এই লটের শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন ঢাকাই সিনেমার সময়ের সবচেয়ে বড় তারকা শাকিব খান।

এ প্রসঙ্গে একটি অনলাইন পত্রিকার সাথে আলাপকালে এস এ হক অলিক বলেন, ‘আমাদের টানা শুটের পরিকল্পনা আছে জামালপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন লোকেশনে। ৩৫ থেকে ৪০ দিন লাগবে সিনেমাটির শুট করতে। অভিনয় শিল্পীরা যাওয়া-আসার মধ্যে থাকবেন, যাঁর যখন শুট, তখন তিনি যোগ দেবেন।‘ তবে শাকিব খান ছাড়া সিনেমাটির অন্য শিল্পীদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চান না এই নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘সিনেমাটিতে কারা অভিনয় করছেন, সেটি মহরত অনুষ্ঠানেই জানাতে চাই; সেটি শুট শুরুর কয়েক দিন আগে ঢাকায় করা হবে।’

ছবির নাম ‘গলুই’ রাখা হয়েছে নৌকা চালানোর জন্য যে গলুই লাগে তা থেকে। নৌকা বাইচ, একজন মাঝির জীবন জীবিকা, প্রেম, ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজের প্রতিচ্ছবি উঠে আসবে ‘গলুই’ সিনেমায়। সিনেমাটিতে একজন মাঝির চরিত্রে অভিনয় করবেন ঢাকাই সিনেমার সময়ের সেরা নায়ক শাকিব খান। প্রযোজক সূত্রে জানা গেছে সিনেমাটি ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, শাকিব খান এবং পূজা চেরী ছাড়াও সিনেমাটিতে আরো অভিনয় অভিনয় করছেন আজিজুল হাকিম ও ফজলুর রহমান বাবু। আর সিনেমাটির বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ এবং হাবিব ওয়াহিদ সহ অনেকেই।

উল্লেখ্য যে, এস এ হক অলিক একাধারে নাটক এবং সিনেমা নির্মান করে থাকেন। অলিক পরিচালিত ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ সিনেমা দুটি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো। এছাড়া অলিক এর আগে সুপারস্টার শাকিব খানকে নিয়ে ‘আরো ভালোবাসব তোমায়’ নামের একটি সিনেমা নির্মান করেছিলেন। ২০১৫ সালে মুক্তি পেয়েছিলো এই সিনেমাটি।

সর্বশেষ আপডেটঃ ০৯. সেপ্টেম্বর ২০২১ ০২:৪৫:এএম ৩ বছর আগে
টাঙ্গাইলে মোবাইল ফোনের বাক্সের সূত্রে ধর্ষণ ও হত্যা রহস্য উদঘাটন - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে মোবাইল ফোনের বাক্সের সূত্রে ধর্ষণ ও হত্যা রহস্য উদঘাটন

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে মোবাইল ফোনের পরিত্যক্ত একটি বাক্সের সূত্র ধরে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। রোববার(৮ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল পিবিআই কার্যালয়ে জণাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমিন ভূঞাপুরে অজ্ঞাত যুবতীর পরিচয় উদ্ধার ও মামলায় জড়িত চার ব্যক্তির গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে বীরভরুয়া নামকস্থান থেকে গত ৩ আগস্ট এক অজ্ঞাত যুবতীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় না পেয়ে মরদেহটি বেওয়ারিশ হিসেবে স্থানীয় ছাব্বিশা গোরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে টাঙ্গাইলের পিবিআই স্বপ্রণোদিত হয়ে গত ৫ আগস্ট মামলাটির দায়িত্ব নেয়। ওইদিনই পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারীকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারীর নেতৃত্ব পিবিআইয়ের একটি চৌকশ টিম গঠন করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। বিভিন্ন সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের ইসপিনজারপুর গ্রামে মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমানের ভাড়া বাড়িতে যোগাযোগ করেন।

তদন্ত টিম মো. মিজানুরকে কৌশলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে তার ঘরে পড়ে থাকা মোবাইল ফোনের পরিত্যক্ত একটি বাক্স কুড়িয়ে পায়। বাক্সটিতে দুটি মোবাইল ফোনের ভাঙা অংশ ছিল। পরে ওই বাক্সের গায়ে লেখা আইএমই নম্বরের সূত্র ধরে অজ্ঞাত যুবতীর বাবা গোপালপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের মো. খোকন মন্ডলের সন্ধান পান। ছবি ও পড়নের কাপড় দেখে মো. খোকন মন্ডল অজ্ঞাত ওই যুবতী তার মেয়ে খোদেজা খাতুন বলে শনাক্ত করেন।

মো. খোকন মন্ডল পুলিশকে জানান, তার মেয়ে খোদেজা খাতুন গত ২ আগস্ট তার নানিবাড়ি একই উপজেলার মনতলা থেকে বাড়ি আসার পথে নিখোঁজ হয়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমিন জানান, অজ্ঞাত যুবতীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তদন্ত কাজ দ্রুত এগুতে থাকে। পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান আনসারীর তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে সোর্সের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার্থী খোদেজা খাতুনকে ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক প্রেমিক সহ চার যুবককে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, গোপালপুর উপজেলার ভেঙ্গুলা গ্রামের স্বর্গীয় নগেন চন্দ্র দাসের ছেলে ঘাতক প্রেমিক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ওরফে সানি আহাম্মেদ(২৮), ধনবাড়ী উপজেলার ইসপিনজারপুর গ্রামের মো. মোশারফ হোসেনের ছেলে সৌরভ আহাম্মেদ হৃদয়(২৩), একই উপজেলার কেরামজানী গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. মেহেদী হাসান টিটু(২৮) এবং একই উপজেলার ইসপিনজারপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মো. মিজানুর রহমান(৩৭)। গ্রেপ্তারকৃতদের রোববার দুপুরে ৩ দিনের করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত কৃষ্ণ চন্দ্র দাস ওরফে সানি আহাম্মেদ পুলিশকে জানায়, পেশায় তিনি একজন নরসুন্দর(নাপিত)। মোবাইল ফোনে মিস কলের মাধ্যমে খোদেজা খাতুনের সাথে তার পরিচয় হয়। তিনি মুসলিম নাম সানি আহাম্মেদ ধারণ করে খোদেজার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন।

পরে দেখা করার কথা বলে ডেকে এনে তার বন্ধু সৌরভের মোটরসাইকেলে ধনবাড়ী উপজেলার ইসপিনজারপুর গ্রামে অপর বন্ধু মো. মিজানুর রহমানের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে খোদেজা খাতুনকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৃষ্ণ চন্দ্র দাস একাধিকবার ধর্ষণ করেন।

চিৎকার-চেঁচামেচিঁ করায় ঘরে থাকা গামছা গলায় পেঁচিয়ে তারা চার বন্ধু মিলে খোদেজাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশটি বস্তাবন্দি করে একটি ভাড়াকৃত সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠিয়ে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে বীরভরুয়া নামকস্থানে ফেলে রাখে। এরআগে তারা খোদেজার ওড়না ও ভ্যানিটিব্যাগ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়।

সর্বশেষ আপডেটঃ ০৯. অগাস্ট ২০২১ ০৬:৫১:পিএম ৩ বছর আগে
জমে উঠেছে ‘ভুরভুরিয়া’ গরু-ছাগলের হাট - Ekotar Kantho

জমে উঠেছে ‘ভুরভুরিয়া’ গরু-ছাগলের হাট

একতার কণ্ঠঃ জমে উঠেছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ভুরভুরিয়া গরু-ছাগলের হাট। প্রতিবারের মতো এবছরও কোরবানীর পশুর ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে এই হাট।বাদ যায়নি পাইকার ও দালালদের আনাগোনা।আসন্ন ঈদুল-আজহা উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলায় বেশ কয়েকটি কোরবানীর পশুর হাট বসানোর অনুমোদি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ভুরভুরিয়ায় অবস্থিত গরু-ছাগলের হাট অন্যতম ।

শনিবার(১৭ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে এই পশুর হাটটি।চলবে আগামী মঙ্গলবার(২০ জুলাই) ঈদুল-আজহার আগের দিন পর্যন্ত।এ হাটের সাথে টাঙ্গাইল,মানিকগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো।টাঙ্গাইল-নাগরপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে, টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে এই হাটের অবস্থান ।ফলে হাট বসার দ্বিতীয় দিনেই রবিবার(১৮ জুলাই) গরু-ছাগল নিয়ে হাজির জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারন কৃষক-খামারী। আদরে পালন করা খাসি নিয়ে হাটে হাজির বেশ কয়েকজন গৃহবধু।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভুরভুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ২ একর জায়গায় বসেছে গরুর হাট। বিদ্যালয় মাঠের পাশে মাছ বাজারে বসানো হয়েছে ছাগলের হাট। বিদ্যালয় ভবনেই পাইকার ও বিক্রেতাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে হাট কতৃপক্ষ। যে কোন মূল্যের গরুর জন্য রওনা(খাজনা) ৫ শত টাকা আর ছাগল-খাসির জন্য ৩ শত টাকা ধার্য করেছেন হাট কতৃপক্ষ। এতে হাটে পশু কিনতে আশা ক্রেতাগণ অত্যন্ত খুশী। ইতিমধ্যে সারি সারি কোরবানীর গরুতে ভরে গেছে হাট প্রাঙ্গন। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পশু কেনা নিয়ে দরদাম চলছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে গরু এনে নামাচ্ছেন খামারীগণ।বেশ একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায় হাট জুড়ে। পাশের মাছের বাজারে বসেছে ছাগল-খাশির হাট। এখানে বেশ কয়েকজন গৃহবধু খাসি নিয়ে এসেছেন বেচার জন্য। খাশির হাটও জমজমাট।

টাঙ্গাইল শহরের মুসলিম পাড়া থেকে হাটে গরু কিনতে আসা রাশেদ সিদ্দিকি বলেন,তিনি প্রতি বছর এই হাট থেকে কোরবানীর গরু কেনেন। এবার তিনি দেখতে এসেছেন গরুর দাম কেমন যাচ্ছে। যদি দামে মিলে যায় তবে এখান থেকেই এ বছরও কোরবানীর গরু কিনবেন।

তিনি আরো বলেন, এখানে যে কোন মূল্যের গরুর রওনা(খাজনা) মাত্র ৫ শত টাকা। যোগায়োগ ব্যবস্থাও ভালো। সহজেই গরু কিনে বাড়ী ফেরা যায়। হাট ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ভালো। করোনা কালে শহরের ভিড় এড়িয়ে তাই আগে ভাগেই তিনি খোলামেলা এই হাটে এসেছেন কোরবানীর গরু কেনার জন্য।

এ ছাড়া পাথরাইল ইউনিয়নের বান্দাবাড়ী গ্রামের তাহেরুল ইসলাম,রেজাঊল করিম ও এনামুল হক পাশের অলোয়া বকুলতলী গ্রামের মোঃ ফজলুল হক, নাগরপুরের ভাররার আব্দুল মান্নান, বাঘিল ইউনিয়নের পাইকমুড়িল গ্রামের কবির খান, কাতুলির চৌবাড়ীয়া গ্রামের রাশেদ দেওয়ান জানান, এখানে অন্যন্য হাটের তুলনায় কোরবানীর পশুর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, কোন ধরনের উটকো ঝামেলা নেই এই হাটে। তাই প্রতি বছর এই হাটেই আসেন তারা কোরবানীর গরু-ছাগল কিনতে।

গরু বিক্রেতা বান্দাবাড়ী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বেপারী, সিলিমপুর ইউনিয়নের বরুহা গ্রামের মোনসের আলী গরু নিয়ে এসেছেন এই হাটে। আশা করছেন, তাদের গরু ভালো দামে বিক্রি হয়ে যাবে। ক্রেতার উপস্থিতি নিয়ে তারা সন্তষ্ট। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গরু বিক্রি করেছেন তারা।

সিলিমপুর ইউনিয়নের চর পাকুল্ল্যা গ্রামের গৃহবধু হামিদা বেগম তার আদরে লালন-পালন করা খাসি নিয়ে এসেছেন ভুরভুরিয়া হাটে। তিনি তার খাসির দাম চাচ্ছেন ১৬ হাজার টাকা। তার আশা, এই দামেই তিনি খাসিটি বিক্রি করতে পারবেন।

বরুহা গ্রামের মীর শফিকুল ইসলাম জানান, এবছর কোরবানী দেওযান জন্য ১২ হাজার ৭ শত টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছেন এই হাট থেকে। বাড়ি ফেরার পথে জানালেন, হাটের পরিবেশ ভালো। কোন রকম ঝামেলায় পড়তে হয়নি খাসি কিনতে গিয়ে।

ভুরভুরিয়া হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ শামিম-আল-মামুন জানান, ২০১১ সালে ভুরভুরিয়া হাটটি জেলা প্রশাসনের অনুমোদি নিয়ে বসানো হয়।হাটের আয়ের টাকা দিয়ে মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান নিম্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেওয়া হয়।বিদ্যালয়টি এমপিও ভূক্ত না হওযায় হাটের আয়ের টাকা দিয়েই বিদ্যালয়ের সমস্ত ব্যয় নির্বাহ করা হয়।অন্য কোন খাতে এই হাটের আয়ের টাকা ব্যয় করা হয় না।

উল্লেখ,সরকারি হিসেবে জেলায় কোরবানির জন্য ৮৪ হাজার ২২০টি(গত দুই বছরের অনুপাতে) পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ছোট-বড় ৬ শতাধিক গরু মোটাতাজা করণের খামার রয়েছে। খামারগুলোতে ৯৫ হাজার ২০০ কোরবানির গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া জেলার কৃষক পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পশু মোটাতাজা করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১৯. জুলাই ২০২১ ০৪:৪৪:এএম ৩ বছর আগে
টাঙ্গাইলে এক রাতে যমুনার গর্ভে শতাধিক বাড়িঘর ও জিওব্যাগ-তাঁত ফ্যাক্টরি - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে এক রাতে যমুনার গর্ভে শতাধিক বাড়িঘর ও জিওব্যাগ-তাঁত ফ্যাক্টরি

একতার কন্ঠঃ প্রমত্ত্বা যমুনা বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় হানা দিয়ে শতাধিক বাড়িঘর, রাস্তা, হাট, তাঁত ফ্যাক্টরি, স’মিল ও ফসলি জমি গিলে ফেলেছে।ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরিভাবে ফেলা জিওব্যাগও যমুনার করাল থাবা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যমুনার প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিতে এক রাতেই শতাধিক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।

জানাগেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বর্ষার শুরুতেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙন শুরু হলেও গত বুধবার(৭ জুলাই) থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার(৮ জুলাই) এক রাতে শুধুমাত্র সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের শতাধিক বাড়িঘর, তাঁত ফ্যাক্টরি, স’মিল ও হাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এ সময় তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের সাথে বঙ্গবন্ধুসেতুর যোগাযোগের সংযোগের অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়কের একাংশ যমুনার পেটে চলে গেছে।মাহমুদ নগর ইউনিয়নের মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া; কাতুলী ইউনিয়নের দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা ও নন্দপাশা; হুগড়া ইউনিয়নের মসপুর, বারবেলা, চকগোপাল ও কচুয়া।

কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের আলীপুর, ভৈরববাড়ী। নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা মাইঝাইল, খাস ঘুণি পাড়া, খাস তেবাড়িয়া,চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়; ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, ভারড়া, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

সরেজমিনে সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের উত্তর চরপৌলী, দশখাদা, হাটখোলা, পানিকোড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরপৌলী হাটখোলা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০মিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে।জিওব্যাগগুলোও যমুনার তীব্র ঘূর্ণাবর্ত স্রোতে তলিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বার বার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়ক(নর্দান প্রজেক্ট) রক্ষার জন্য ১০০মিটার এলাকায় ফেলা জিওব্যাগ তলিয়ে গিয়ে ভাঙনে সড়কটির ৫০০-৬০০মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

কাকুয়া ইউনিয়নের উত্তর চরপৌলীর নুরুল ইসলামের দেড় একর জায়গায় স্থাপিত তাঁত ফ্যাক্টরি, ঠান্ডু মিস্ত্রির স’মিল, একই এলাকার আ. জলিল, আ. বাতেন, আব্দুস সামাদ, মো. ইসমাইল, মোতালেব হোসেন, আব্দুল খালেক প্রামাণিক, আব্দুল আলিম, আব্দুর রহিম,বাবুল মোল্লা, নুর আলম মোল্লা, আব্দুল্লাহ, আবু বকর, আব্দুল মান্নান, লালচান মিয়া, মেকাম্মেল হক, শামসুল আলম, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম; দশখাদা ও হাটখোলা এলাকার নুরুন্নাহার বেগম, মিনা আক্তার, সোনা খা, শিবলু তালুকদার, আলেয়া বেগম;পানকোড়া ও কবরস্থানপাড়ার মন্টু শেখ, মো. রোশনাই মিয়া, আব্দুস ছবুর, আনছের মন্ডল, গোলাপ খা, আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডল সহ শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি ভাঙনের শিকার হয়ে যমুনা গর্ভে চলে গেছে।

উত্তর চরপৌলী গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, দেড় একর জায়গায় তার তাঁত ফ্যাক্টরি ছিল। ফ্যাক্টরিতে ৫০টি পাওয়ারলোম চালু অবস্থায় ছিল।বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে। তিনি শ্রমিকদের নিয়ে ফ্যাক্টরির তাঁতগুলো কোন রকমে সরিয়ে নিতে পারলেও ঘরটি নদীর পেটে চলে গেছে।

হাটখোলা এলাকার গৃহবধূ মিনা আক্তার জানান, তাদের ৬০ শতাংশের বসতবাড়ি ছিল। সাম্প্রতিক ভাঙনের শিকার হয়ে এখন ১২-১৩ শতাংশ ভূমির উপর মাত্র একটি ঘর টিকে আছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে সেটাও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।তারা বর্তমানে চরপৌলী খামার পাড়া এলাকায় সরকারি খাস জমিতে বসবাসের জন্য ঘর নির্মাণ করছেন।

কবরস্থান পাড়ার আব্দুল গফুর মন্ডল ও আজিজ মন্ডল জানান, বুধবার(৭ জুলাই) বিকালে হঠাৎ যমুনা বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রলয়ঙ্করী তান্ডব চালিয়ে মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে ৬০ শতাংশের বাড়িঘর নদীর পেটে চলে গেছে।তারা পাশের হাটে বাজার সদাই করাবস্থায় চিৎকার-চেচাঁমেচি শুনে দৌঁড়ে এসে দেখেন তাদের বাড়িঘর নেই। মুহুর্তের মধ্যে যমুনা গ্রাস করে নিয়েছে।

কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, ভাঙনের শিকার হয়ে তার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত ৩-৪দিনের ভাঙনে ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম চরপৌলীর বহু স্থাপনা ও বাড়িঘর যমুনার যমুনা গিলে খেয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেললেও তা কোন কাজে আসছে না। তারা সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের গোলচত্তর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। এ ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।দীর্ঘ তিন বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০. জুলাই ২০২১ ০৩:২৮:এএম ৩ বছর আগে
টাঙ্গাইলে কোরবানির গরু আছে ক্রেতা নেই; অনলাইনেও জমেনি পশুর হাট - Ekotar Kantho

টাঙ্গাইলে কোরবানির গরু আছে ক্রেতা নেই; অনলাইনেও জমেনি পশুর হাট

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে খামার ও কৃষক পর্যায়ে কোরবানির জন্য প্রায় দেড় লাখ গরু প্রস্তুত থাকলেও করোনার কারণে হাট না বসানোয় ক্রেতা মিলছে না।সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোরবানির পশু বিকিকিনির জন্য অনলাইন হাটের ব্যবস্থা করা হলেও এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় জমে ওঠছে না।ফলে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে কৃষক ও খামারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে ঈদুল আযহার আগে ৩-৪দিন হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হলে এ অবস্থার কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন খামারী ও কৃষকরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাগেছে, টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ছোট-বড় ৬ শতাধিক গরু মোটাতাজা করণের খামার রয়েছে।খামারগুলোতে ৯৫ হাজার ২০০ কোরবানির গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া জেলার কৃষক পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পশু মোটাতাজা করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সূত্রমতে, সরকারি হিসেবে জেলায় কোরবানির জন্য ৮৪ হাজার ২২০টি(গত দুই বছরের অনুপাতে) পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। করোনার কারণে দেশে কঠোর লকডাউন চলমান থাকায় জেলার গরুর হাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।জেলার গরুর হাট হিসেবে খ্যাত ৩-৪টি হাটে ইজারাদাররা ব্যক্তি উদ্যোগে হাট বসানোর চেষ্টা করায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা কোরবানির হাট বসানোর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এদিকে, অনলাইন কেনাকাটা উৎসাহিত করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কোরবানিকে সামনে রেখে ১৩টি অনলাইন পশুর হাট পেইজ খোলা হয়েছে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজে খোলা এসব হাটগুলোর মধ্যে জেলার ১২টি উপজেলায় ১২টি এবং জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে একটি রয়েছে।এসব পেইজে বৃহস্পতিবার(৮ জুলাই) পর্যন্ত তিন হাজার ৬৮১টি পশুর বিবরণ সহ ছবি আপলোড করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩২টি কোরবানির পশু সরকারি অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।

সরেজমিনে কৃষক জাহাঙ্গীর আলম, বুলবুল হোসেন, দবির উদ্দিন, আজিজুর রহমান, বাবলু মিয়া, রমজান আলী, লালচান মিয়া, নজরুল ইসলাম সহ অনেকেই জানান, তারা প্রতি বছর কোরবানি সামনে রেখে ২-৪টি ষাড় বাছুর কিনে মোটাতাজা করেন।মোটাতাজাকরণে পরিবারের সবাই কম-বেশি শ্রম দেন। কোরবানির সময় বিক্রি করে তারা বেশ লাভবান হন। এ বছরও তারা ষাড় বাছুর কিনে মোটাতাজা করেছেন।কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউন চলছে। ফলে এখনও পর্যন্ত কোন পাইকার তাদের গরু কেনার জন্য আসেনি। হাট বন্ধ থাকায় তাদের গরুগুলো বাড়িতেই রয়েছে। অনলাইন হাট সম্পর্কে তাদের ধারণা না থাকায় সেখানেও কোন রকম যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সব মিলিয়ে তারা এবার গরু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

টাঙ্গাইল পৌরসভার বালুচরা এলাকার বীণা এগ্রো ফার্মের মালিক শাহ আজিজ তালুকদার জানান, কোরবানিকে সামনে রেখে তিনি ১৫টি দেশি জাতের গরু লালন-পালন করছেন।ইতোমধ্যে গরুগুলো ক্রয় ও পালনে তিনি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। করোনায় হাট-বাজার বন্ধ থাকায় তিনি অনলাইনে চেষ্টা করে আশানুরূপ সাড়া পাননি। ভারতীয় গরু দেশে না এলে তিনি এবারও লাভের মুখ দেখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

ভূঞাপুরের বৃহৎ খামার চকদার গরুর খামারের মালিক মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, এ বছর কোরবানির জন্য তিনি ১০০টি ষাড় ও বলদ মোটাতাজা করেছেন। এরমধ্যে ৪০টি বলদ ও ৬০টি ষাড় গরু রয়েছে।করোনার কারণে এবার তিনি অনলাইনে গরু বিক্রির উপর জোর দিয়েছেন। ফেসবুকে পেইজ খুলে গরুর ছবি দিয়ে তিনি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছেন। এতে ভালো সাড়াও পেয়েছেন।প্রতিদিনই অনলাইনে লোকজন যোগাযোগ করছেন, পাইকাররাও ফেসবুকে দেখে স্বশরীরে আসছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনি ২৬টি ষাড় ও বলদ বিক্রি করেছেন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর গরুর হাট ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী গরুর হাটের ইজারাদার মো. লিটন মন্ডল জানান, স্থানীয় নানা জটিলতার কারণে বৃহত্তর এ হাটটি ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে।করোনার কঠিন আঘাত তাদের জন্য ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার হাটবারেও গরু থাকলেও কঠোর লকডাউনের কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটে বিকিকিনি বন্ধ করে দিয়েছে।এছাড়া লকডাউনের কারণে ক্রেতা ও পাইকাররা আসতে পারছেনা। গত বছর হাট ইজারা নিয়ে বেশ লোকসান গুনতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে গোবন্দিাসী গরুর হাট অস্তিত্ব হারাবে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, কঠোর লকডাউনের কারণে হাট-বাজার বন্ধ রয়েছে।কোরবানির পশু বিকিকিনি করতে জেলা প্রশাসন ও প্রাণি সম্পদ দপ্তরের উদ্যোগে একটি এবং জেলার ১২টি উপজেলায় ১২টি মোট ১৩টি ফেসবুক পেইজ খোলা হয়েছে। ওইসব পেইজে খামারী ও সাধারণ কৃষকদের অনলাইনে পশু কেনাবেচাঁর সুযোগ তৈরি হয়েছে।অনেকে এ সুযোগ গ্রহন করছেন। সরকারি নির্দেশনা পেলে পশুর হাট বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ১০. জুলাই ২০২১ ০৩:৫৬:এএম ৩ বছর আগে
মধুপুরে সফল ভাবে পার্পেল পটেটোর আবাদ - Ekotar Kantho

মধুপুরে সফল ভাবে পার্পেল পটেটোর আবাদ

একতার কন্ঠঃ মন মাতানো ফ্লেভারের কফি, সুমিষ্ট ড্রাগন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টার পর এবার পুষ্টিকর পার্পেল পটেটো চাষে সফলতা দেখিয়েছেন এক অদম্য কৃষক। এ কৃষকের নাম সানোয়ার হোসেন। বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামে।

গ্রাজুয়েশনের পর সানোয়ার শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেটি ছেড়ে বাপ-দাদার জীবিকা কৃষিকেই জীবিকা হিসেবে বেছে নেন। পারিবারিকভাবে পাহাড়ি লাল মাটির ছয় একর জমিতে বরাবরই আনারস আবাদ হয়। সেটির পাশাপাশি নতুন করে চার একরে মাল্টা, এক একরে ড্রাগন, তিন একরে কফি, বাতাবি লেবু, অ্যারাবিয়ান খেজুর ও পেঁপের আবাদ যোগ করেন তিনি। গতবার এক কৃষিবিদের মাধ্যমে আমেরিকান জাতের পার্পেল পটেটো বা বেগুনি আলুর কন্দ সংগ্রহ করেন। সেটি লাগান এক একর জমিতে। শতাংশে ফলন পেয়েছেন দুই মণ। কেজিতে বিক্রি ১০০ টাকা দরে। আকর্ষণীয় রং আর ব্যতিক্রম স্বাদের দরুন বেচাবিক্রিতে কোনো সমস্যা হয়নি। সানোয়ার জানান, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নয়, নিরাপদ ও জৈব কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আনারসসহ বৈচিত্রময় ফল ও ফসল আবাদ করেন তিনি। বাড়িতে রয়েছে গরুর খামার। সেটির গোবরে তৈরি হয় কম্পোস্ট সার।

পার্পেল চাষ সম্পর্কে জানান, মধুপুরের পাহাড়ি এলাকায় শ্রাবণ-ভাদ্রে মাসে বাগান থেকে আনারস তোলার পর এমনিতেই চার মাস জমি পতিত থাকে। সেই জমিতে মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সহজেই পার্পেল আবাদ সম্ভব। খরা প্রতিরোধক হওয়ায় সেচ এমনকি সারও লাগে না। পোকামাকড়ের উপদ্রব তো নেই-ই। আলু তোলার পর জমিতে লতানো গাছ গবাদিপশুর উত্তম খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।

একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পুষ্টিবিদ ড. আবু রায়হান জানান, বিশ্বে ৪০০ রকমের মিষ্টি আলুর মধ্যে জাপানি এবং আমেরিকান জাতের বেগুনি আলু বা পার্পেল পটেটো সবচেয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ। আঁশ সমৃদ্ধ এ আলুতে প্রচুর শর্করা ছাড়াও পটাশিয়াম, ভিটামিন এ বি সি বিটা ক্যারোটিন এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি কোষের ক্ষয়রোধ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।সনাতন রীতিতে খাওয়া ছাড়াও ভেজিটেবল, স্যুপ এবং সালাদের সঙ্গেও এটি চলে।

মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার এরশাদ আলী জানান, দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পার্পেলসহ যে কোনো মিষ্টি আলু চাষের উপযোগী। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর কন্দ বা চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আগে নদীতীরের পলি মাটিতে এর আবাদ হতো। এখন সানোয়ার হোসেনের মতো খামারিরা মধুপুরের লাল মাটিতে লাভজনক ফসলের তালিকায় পার্পেলকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। খামারের একই জমিতে পর্যায়ক্রমিকভাবে ফল ও ফসল আবাদ করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পুষ্টিকর পার্পেল এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুর গড়ে প্রায় ৫০ একরে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। তবে পার্পেল জাতের আবাদ এবারই প্রথম। মধ্যবর্তী বা একক ফসল হিসেবে পার্পেলের বানিজ্যিক চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। শতভাগ বিশুদ্ধ খাবার হিসেবে বিদেশে রফতানির সুযোগও রয়েছে। চাষিদের আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এজন্য ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ নেওয়া হয়েছে। হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য প্রদর্শনী প্লটও করা হয়েছে। পার্পেল ছাড়াও বারী উদ্ভাবিত দুটি উফসি জাতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ আপডেটঃ ২৪. মে ২০২১ ০১:২৫:এএম ৪ বছর আগে
কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।