একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নুর-ই-খোদা রায়েজ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করছেন, চিকিৎসকের অবহেলায় ওই বীরমুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে নিহতের স্বজন ও হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে পাঁচ জন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার(১ জুন) সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর-ই-খোদা রায়েজ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না দিয়ে সিট না থাকায় মেঝের(ফ্লোরের) বিছানায় রাখা হয়। পরে কর্তব্যরত নার্স একটি ইনজেকশন দিতে তার স্বজনদের কাছে চার হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দেওয়ার পর অসুস্থ্য বীরমুক্তিযোদ্ধাকে ইনজেকশন দেওয়া হলেও কোন ডাক্তার তাকে দেখতে আসেন নি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর-ই-খোদা রায়েজ মারা যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাসপাতালের জানালা ভাংচুর করে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক(আরএমও) ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সজিব কয়েকজন কর্মচারী ও বহিরাগত ব্যক্তিকে নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের উপর পাল্টা হামলা চালায়। এ হামলায় নিহত বীরমুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জন আহত হয়। পরে স্বজনরা বীরমুক্তিযোদ্ধার লাশ নিয়ে বাড়ি যেতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক(আরএমও) ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সজিব লাশ নিতে বাঁধা দেন। এ সময় আবার উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ইমরান ৯৯৯- এ ফোন করেন। ৯৯৯- এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা নুর-ই-খোদা রায়েজের ছেলে ইমরান জানান, একজন বীরমুক্তিযোদ্ধাকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারাত্মক অন্যায় করেছে। মৃত্যুর পর বীরমুক্তিযোদ্ধার মরদেহ স্বজনদের নিতে না দিয়ে আরএমও ডা. সজিব চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। তিনি আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সজিব ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
হুগড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা জানান, তার সামনেই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সজিব লোকজন নিয়ে নিহত বীরমুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের উপর হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে আহত করেছে এবং মরদেহ নিতে বাধা দিয়েছেন। তিনিও অভিযুক্ত আরএমও’র শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম সজিব জানান, রোগীর স্বজনরা অহেতুক হাসপাতালে ভাংচুর চালিয়েছে ও নার্সের শরীরে আঘাত করেছে। এ কারণে উপস্থিত হাসপাতালের স্টাফদের সাথে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় কোন পক্ষই থানায় অভিযোগ করেননি। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।