আরমান কবীরঃ টাঙ্গাইলে হামাগুড়ি দিয়ে নিজ বসতভিটায় পৌঁছাতে হচ্ছে অর্ধশত পরিবারের সদস্যদের। এমন অমানবিক কষ্ট দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত পোহাতে হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আওতাধীন করটিয়া ইউনিয়নের নগর জলফৈ গ্রামের উপজেলা সংলগ্ন প্রায় অর্ধশত পরিবারের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার মানুষের বাপ-দাদার বসতভিটেতে মন চাইলেই মাথা উচু করে যাতায়াত করার কোন উপায় নাই। বাড়িতে চলাচলের একমাত্র উপায় হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পরিষদের বাউন্ডারি ওয়ালের নীচ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে। দীর্ঘ ২৮ বছরেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদ।
দীর্ঘদিনের এ দূর্ভোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আব্দুল বাতেন খান মনা বলেন, আমরা দীর্ঘ ২৮ বছর যাবত এ ধরনের অমানবিক এবং মানবেতর জীবনযাপন করে আসছি। সদর উপজেলার বাউন্ডারির নীচের মাটি একটু সরিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছেএখানে বসবাসরত নারী পুরুষ সকলের।
তিনি আরও বলেন, এখানে আমরা প্রায় ৫০ টি পরিবার রয়েছি। এখানে আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি। বাড়িতে যাতায়াত করার একটি ছোট রাস্তাও না থাকাতে আমাদের সীমাহীন কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিশেষ করে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের জন্য উপজেলার বাউন্ডারি জন্য নিচু হয়ে পাড়াপাড় হওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে যায়। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
এ বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য অরিন খান বলেন, আমাদের এই দূর্ভোগ দেখার কেউ নাই। বিগত বছর গুলোতে কয়েক দফা টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে রাস্তাটির সমস্যা লাঘবের জন্য লিখিত আবেদন দিয়েও কোন কাজ হয়নি। বিগত দিনে উনারা বহুবার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সমাধান করে দিবেন রাস্তার কাজের একটু অগ্রগতিও হয়েছে কিন্তু কোন এক অজানা কারনে বারবার কাজ থেমে যায়। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান মজনুকে বার বার অবহিত করার পরেও কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদের এই দূর্ভোগ দেখার কেউ নাই। এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর কোনো সদস্য মারা গেলেও মৃত দেহটিও উপজেলার বাউন্ডারির নীচ দিয়ে হামাগুড়ি দিয়েই বের করতে হয়। এর চাইতে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কাছে রাস্তা নির্মানের জন্য উপজেলা কর্তৃক বরাদ্দকৃত জায়গা পুনরায় পরিমাপ করে বুঝিয়ে দিয়ে আমাদের রাস্তা নির্মানে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে করটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান চৌধুরী মজনু বলেন, আমার পক্ষ থেকে আমি রাস্তা দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এখনো যদি আমাকে এ বিষয়ে প্রয়োজন হয় আমি অবশ্যই ভুক্তভোগীদের পাশে থাকবো।
এদিকে সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন শরীফ বলেন, আমি এখন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পালন করছি। যতটুকু শুনতে পারলাম বিষয়টি দু:ক্ষজনক। সদর উপজেলায় নতুন ইউএনও খুব শীগ্রই বসবেন। আশা করি, উনি এর সমাধান করবেন। আমার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ন্যায়সঙ্গতভাবে কিছু করার থাকলে আমি অবশ্যই করবো।