একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে যারা শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দেখিয়ে সদস্য হয়েছেন তাদের আগামী ৭ দিনের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় কেউ যদি জাল সনদ দেখিয়ে সদস্য হয়েছেন এমন প্রমাণিত হয় তাহলে তার/ তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার(২৫ অক্টোবর) সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংশোধন কল্পে আয়োজিত এক বিশেষ সাধারন সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
প্রেসক্লাবের বিশেষ সাধারণ সভায় এই সময়সীমা বেঁধে দেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক খান মোহাম্মদ খালেদ।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বিধান নূন্যতম গ্র্যাজুয়েট না হলে সদস্য হওয়া যাবেনা। তারপরেও অনেকে গ্র্যাজুয়েট না হয়েও সদস্যপদ চান বা সদস্যপদ লাভ করেছেন। অনেকে জাল সার্টিফিকেটে সদস্য হয়েছেন। এর চাইতে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারেনা।
তিনি আরো বলেন, জাল সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে যারা সদস্য হয়েছেন তারা নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দিয়েছেন। যারা প্রেসক্লাবকে ভুল বুঝিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দিয়ে সদস্যপদ নিয়েছেন যার যার সম্মান নিয়ে আগামী ৭দিনের মধ্যে সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭৪ জন। এর মধ্যে দুইজন মৃত্যু বরণ করেছেন।বাকি ৭২ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ১১ জন রয়েছেন যারা শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দেখিয়ে সদস্য হয়েছেন।
এসব সদস্যরা দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ প্রতিনিধি ,জেলা প্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব জাল সনদধারীদের সদস্যপদ বাতিলের জন্যে নানা সময়ে দাবি উঠলেও অজ্ঞাত কারনে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য,গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের নির্যাতিত ও বঞ্চিত সাংবাদিকসহ জেলায় কর্মরত বিক্ষুদ্ধ সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এ সময় সাংবাদিকরা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রেসক্লাব এবং প্রেসক্লাবকে সাংবাদিক বান্ধব করতে গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনসহ ব্যাপক সংস্কারের দাবিতে নানা কর্মসুচি পালন ও আল্টিমেটাম দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে প্রেসক্লাবের জৈষ্ঠ্য সাংবাদিকরা গঠনতন্ত্র সংস্কারসহ নানা উদ্যোগ গ্রহন করেন। পরে প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদ বিশেষ সাধারন সভা আহবান করা হয়।
এর আগে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান খান আজাদকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, প্রেসক্লাব সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি কামনাশীষ শেখর এবং প্রেসক্লাবের সদস্য ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক মির্জা শাকিল।
গঠনতন্ত্র সংশোধনের মধ্যদিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৬ নেতার সদস্যপদ পদ বাতিল করা হয়।
এছাড়াও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় পত্রিকার দুই সম্পাদকের সদস্যপদ বাতিল হওয়ার ফলে তাদের মনোনীত আরো দুইজনের সদস্যপদও বাতিল হয়ে যায়।
প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্যপ্রয়াত ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ ও কার্যকরী সদস্য সুজয় দেব এবং শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি।
এছাড়াও, দৈনিক দেশবাসী পত্রিকার কোটায় সদস্যপদ পাওয়া নিলুফা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, দৈনিক টাঙ্গাইল সময় পত্রিকার মোজাম্মেল হক ও সাপ্তাহিক মৌ বাজার পত্রিকার আশিকুর রহমান পলাশ।
শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের সঞ্চালনায় এই বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট জাফর আহমেদ।
সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক বিমান বিহারী দাস, খান মোহাম্মদ খালেদ, আতাউর রহমান আজাদ, শামসাদুল আখতার শামীম, মাহমুদ কামাল, আবু রায়হান খান, কামনাশীষ শেখর, মির্জা শাকিল, মহব্বত হোসেন, সোহেল তালুকদার প্রমুখ।