পরাজিত শক্তি পেছন দরজা দিয়ে আমাদের পিঠে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করছে: মামুনুল হক


০৭:০৫ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পরাজিত শক্তি পেছন দরজা দিয়ে আমাদের পিঠে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করছে: মামুনুল হক - Ekotar Kantho
শনিবার সকালে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক

একতার কণ্ঠঃ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, দেশের হাজার বছরের ইতিহাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি হওয়া উচিত। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর আজও আবার সেই পরাজিত শক্তি পেছন দরজা দিয়ে আমাদের পিঠে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করছে।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস টাঙ্গাইল জেলা শাখার আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া এবং নৈরাজ্যবাদ বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আল্লামা মামুনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ রাতের অন্ধকারে সংখ্যালঘুদের ওপর কালনাগিনী হয়ে ছোবল মারতো। দিনের বেলায় তারাই আবার ওঝা হয়ে ঝারতে আসতো। এই নাটক করেছে আওয়ামী লীগ। এই নাটকের কলা-কুশিলবরা এখন বাংলাদেশের দৃশ্য নাই। এর জন্য এখন নাটকও নাই। এখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন। তাদের মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় আর হামলা হয় না। হিন্দুধর্মাবলীদের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-ঘরে কেউ হামলা চালায় না। কারণ আক্রমণকারী আওয়ামী লীগাররা এখন পালিয়ে আছে।

তিনি বলেন, ওরা যদি আবার ঢুকতে পারে শুরু করবে সংখ্যালঘুদের দিয়ে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘর জ্বালাবে, হিন্দুদের মূর্তি ভাঙবে এগুলো করে সাম্প্রদায়িক কামিল হটাবার চেষ্টা করবে। তাই সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ এই মুনাফিক শক্তিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর পূর্ণবাসিত হতে দেওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে নজির বাংলাদেশে চলছে এটাকে অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের ৯০ ভাগ মুসলিমদের চেতনা, তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে যদি সম্মান জানাতে না পারেন এদেশে কোন দিনও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবস্থান ভাল রাখা যাবে না। সম্প্রীতির সকল জায়গাগুলোতে সম্মিলিতভাবে আমরা সংরক্ষণ করব। আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্প্রীতির বাংলাদেশ, ইনসাফের বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন এক বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই বিজয় অর্জন করা যতটা কঠিন, বিজয়কে রক্ষা করা তার চেয়েও বেশি কঠিন। আমরা যদি সাময়িক বিষয়ের তৃপ্তিতে, আমরা যদি তৃপ্তির ঢেকর তুলি, এই বিজয় যে কোন সময় ছিনতাই হয়ে যেতে পারে। যে কোন মুহূর্তে এই বিজয় আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে। পরাজিত শক্তি বসে নেই। কথিত স্বৈরাচার এখনো বাংলাদেশের মানুষের বুকের উপর ছোবল মারার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিল বিভাজনের রাজনীতি। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার বিভাজনের রাজনীতি পরাজিত হয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল। এই ঐক্য ছিল বাংলাদেশের আগস্ট বিপ্লবের শক্তি এই ঐক্যের মাধ্যমে এদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদকে পরাজিতা করতে সক্ষম হয়েছে। আপনারা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারীর যাতাকল থেকে মুক্ত করেছেন। আমাদের সংগ্রাম আরও বাকি রয়েছে। ফ্যাসিবাদের অবশিষ্ট শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত না করা পর্যন্ত এদেশে কেউ নিরাপদ নয়। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই ঐক্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে বিএনপি-জামায়াত -হেফাজত ইসলাম আমরা কেউ এ দেশে নিরাপদে থাকতে পারবো না। শেখ হাসিনা শুধু একা নয়, তার পিছনে লুকিয়ে আছে ওই শক্তি যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ভাবে দেখতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে আপা আপা সংবাদ পাঠান, চট করে ঢুকে পড়ার পাঁয়তারার ধান্দা করতেছেন। আপা যেখানে আছেন ভালো আছেন। ওখানে থাকেন আমরা ধরে আনব সময় মতো। এর আগে ঢোকবার চেষ্টা করবেন না এদেশের মানুষের কবলে পড়লে কত ধানে কত চাল হিসাবটা বুঝতে পাবেন।

শেখ হাসিনার সর্ম্পকে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার রাজনীতি ছিলো প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এতো মানুষ মরে নাই। ৭১’ থেকে ৭৫’ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যে মানুষের জন্য তার মায়া নেই। এই দেশটাকে তিনি স্বাধীন রাখতে চায়নি। চোখে কোন অশ্রু নাই। সব চোখের অশ্রু শুধু ১৫ আগস্টের জন্য। এই বৈষম্য ভালো না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) গোপালগঞ্জে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার প্রকৃত দোষীদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পূর্ণবাসন করবার জন্য যারা যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সমাবেশে টাঙ্গাইল জেলা ক্বওমী ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল আজিজের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সুরা সদস্য মুফতি আশরাফুজ্জামান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ এনামুল হাসানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।