একতার কণ্ঠ ডেস্ক ঃ টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায় শতাধিক ধান কাটা শ্রমিককে রাতভর আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাতে কৃষি অফিসের অনুমতিপত্র নিয়ে ওই শ্রমিকরা দুটি ট্রাকে করে পাবনা থেকে হবিগঞ্জে ধান কাটতে যাচ্ছিলেন। তবে পুলিশের দাবি কঠোর বিধিনিষেধ মানাতেই শ্রমিকদের ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পাবনার আতাইকুলা এলাকা থেকে জীবিকার তাগিদে ধান কাটা শ্রমিক হিসেবে হবিগঞ্জে যাচ্ছিলেন শতাধিক ব্যক্তি। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ তাদের বহন করা দুটি ট্রাক আটকে দেয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
রবিউল ইসলাম নামে ৬৫ বছর বয়সী এক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, এই বয়সে শুধুমাত্র পেটের দায়ে অন্য জেলায় ধান কাটতে যাচ্ছি। যদি আটকেই দেবে তবে এলাকাতেই আটকে দিত। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তো আমরা ধান কাটতে যাচ্ছি। এই বয়সে কয় বেলা না খেয়ে থাকা যায়? এখন জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি। সেখানেই না হয় পরিবারের সঙ্গে না খেয়ে মরবো।
শ্রমিকরা বলেন, পাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যরাত আসতে কোনো সমস্যা হয়নি। এলেঙ্গা আসার পর পুলিশ তাদের ট্রাক আটকে দেয়। এ সময় টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা দিতে না পারায় ট্রাক দুটি ফাঁড়ির সামনে নিয়ে যায়। রাতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। না খেয়ে রাত থেকে কষ্ট করতে হচ্ছে। পায়খানা-প্রসাবের জায়গা না থাকায় কষ্ট আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
তারা আরও বলেন, কাজ না থাকায় আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছিলাম। তাই আমাদের উপজেলা কৃষি অফিসার ও চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে ধান কাটতে হবিগঞ্জের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের অনুমতিপত্র জব্দ করে রেখেছে।
ট্রাকচালক উজ্জল মিয়া বলেন, শুক্রবার বিকেলে পাবনা থেকে রওনা দিয়েছি। রাত ১১টার দিকে এলেঙ্গা আসলে পুলিশের এক অফিসার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা ট্রাকের সব শ্রমিককে নামিয়ে দিতে বলেন। শ্রমিকদের বাসে যেতে বলেন। পরে অপর এক পুলিশ অফিসার এসে শ্রমিকসহ ট্রাক ফাঁড়িতে নিয়ে যান। গাড়ির কাগজপত্রও পুলিশ জব্দ করেছে।
পাবনা সদর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান রশিদ হোসাইনী বলেন, তাদের অনুমতিপত্র দেওয়া আছে। তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি। পুলিশ হয়তো আইনগত ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মানবিক দৃষ্টিতে কাজটি তেমন ভালো হয়নি। আরেকটি বাসের ব্যবস্থা করে পুলিশ তাদের গন্তব্য পৌঁছাতে সহযোগিতা করতে পারত।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত বলেন, টাকা দাবির বিষয়টি মিথ্যা। একটি ট্রাকে ৪৮ ও অপর ট্রাকে ৭২ জন শ্রমিক ছিল। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তারা গন্তব্য যাচ্ছিলেন। এছাড়াও গতকাল মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ পরিপন্থী কাজ করায় তাদের ট্রাক আটক করা হয়েছে। পরে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে দু’টি বাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। এতে শ্রমিকদের কোনো বাস ভাড়া দিতে হবে না। এছাড়া বাসটি যাতে কোথায় না আটকায় সেজন্য একটি প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয়েছে।