মগড়া বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ


০৮:৫৮ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
মগড়া বালিকা বিদ্যালয়ে এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

শিক্ষাবোর্ড থেকে তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এই বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত আরও ২ হাজার ৫’শত টাকা নেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন।

তবে সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিনের দাবি, ভালো ফলের জন্য কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ফরম পূরণের সময় শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত ২ হাজার ৫’শত টাকা কোচিং ফি বাবদ নেয়া হয়েছে। এছাড়া কোন বেতন নেওয়া হয়নি।


জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরমপূরণ করেছে মোট ১০৪ জন শিক্ষার্থী। এবছর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া যাবে সেটি নির্ধারণ করে দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বোর্ড ফি ১ হাজার ৬২৫ টাকা ও কেন্দ্র-ফি ৫১৫ টাকাসহ মোট ২ হাজার ১৪০ টাকা। বাণিজ্য বিভাগ ও মানবিক বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড ফি ১ হাজার ৫৩৫ টাকা ও কেন্দ্র-ফি ৪৮৫ টাকাসহ মোট ২ হাজার ২০ টাকা হারে নির্ধারণ করে গত ১৭ অক্টোবর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ফরম পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ফি নেওয়া যাবে না উল্লেখ করা হলেও মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে ৪ হাজার ৭০০ টাকা রশিদ ছাড়াই নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানায়, ৫ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে এসএসসি ফরম পূরণ করতে হয়েছে। মেয়ে বাড়ি গিয়ে জানিয়েছে, এ টাকা না দিলে নাকি ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না। তাই কি করমু ডাবল টাকা দিয়ে ফরমপূরণ করতে বাধ্য হয়েছি। এভাবে কি সন্তাদের লেখাপড়া করানো সম্ভব?

তারা আরও জানায়, ফরম পুরণের সময় দুই বছরের বেতন বাবদ ৬০০ ও ৩ মাসের কোচিং ফি বাবদ ২৫০০ টাকা আগে পরিশোধ করতে হয়েছে। এরপর ফরমপূরণের টাকা নিছে।

মো.রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান, আমার সাথে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির ছোট ভাইয়ের সাথে সখ্যতা থাকায় ৩ হাজার ১’শত টাকা দিয়ে মেয়ের ফরমপূরণ করেছি।

তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাদের জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ফরমপূরণ করা খুবই কষ্টের ব্যাপার।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের নবম শ্রেনীর দুই শিক্ষার্থীকে দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন তার নিজের রুম পরিষ্কার করাচ্ছেন।

বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে গত দুই বছর যাবত আয়া নেই। তাই শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠ ক্লাসরুম আর অফিস পরিষ্কার করানো হয়।

বিদ্যালয়ের একাধিক সুত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম গত কয়েক বছর যাবত শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকায় সহকারি প্রধান শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন ও অফিস সহকারী আমীর হোসেন মিলে বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছেন। তারা দুজনেই স্থানীয় হওয়ায় বিদ্যালয়ে অন্য শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।

সুত্র আরও জানায়, এবারের মোট এসএসসি পরিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৫জন। এর মধ্যে অনিয়মিত পরিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ৭ থেকে ৮জন। শুধু নিয়মিত পরিক্ষার্থীরাই কোচিং ফি বাবদ টাকা জমা দিয়েছে।

মগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. মেনহাজ উদ্দিন বলেন, ছাত্রীদের ভালো ফলের জন্য কোচিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ফরম পূরণের সময় শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত ২ হাজার ৫’শত টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সরকারিভাবে কোচিং নিষিদ্ধ হলেও কিভাবে তারা সেটি করাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভালো ফলাফলের জন্য বেসরকারি স্কুল গুলো কোচিং এর আয়োজন করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত টাকার বাহিরে অতিরিক্ত টাকা শুধু আমরাই নিচ্ছি না,অনেক বিদ্যালয়ই নিচ্ছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক এর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান-বিন-মুহাম্মাদ আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমান পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।