জনবল সঙ্কটে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল


১০:৫৩ পিএম, ৩ জুন ২০২৩
জনবল সঙ্কটে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সহ জনবলের অভাবে পুরোপুরিভাবে স্বাস্থ্য সেবা চালু হচ্ছেনা। চাহিদা অনুযায়ী জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও ফলপ্রসূ হয়নি।

ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিশালকায় ভবন এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পাশে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১৫তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৮ সালের শেষ দিকে ভবন নির্মাণ শেষ হয়। ২০২২ সালের ২২ মার্চ হাসপাতাল ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দেয় গণপুর্ত বিভাগ।


সূত্রমতে, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়। এছাড়া শিশু, ডায়রিয়া, কার্ডিওলজি, অবস(গাইনী), চক্ষু, নাক, কান, গলা, পোস্ট অপারেটিভ, আইসিইউ, সিসিইউ, সার্জারী, অনক্লোনজি ও অর্থপেডিক ওয়ার্ড চালুর প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২১ জুন থেকে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে মেডিসিন, শিশু, গাইনী, সার্জারী, চক্ষু, ডেন্টাল, বক্ষব্যাধি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, মানসিক, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ফিজিক্যাল মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, নেফরোলজি, অর্থপেডিক, অনক্লোনজি(ক্যান্সার) সেবা চালু রয়েছে। গত বছরের শুরু থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, সিটিস্ক্যান, এক্সরে সহ বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১০টি আইসিইউ বেড, সিসিইউ ও ১৫টি অপারেশন থিয়েটার চালু করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, জনবল সঙ্কটে হাসপাতালে পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে ৬৫ জন ডাক্তার প্রয়োজন। সেখানে রয়েছে ৬১ জন। তারা নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। অনেকে ঢাকা থেকে এসে অফিস করেন।

১৬৫ জন নার্সের মধ্যে মাত্র ৩৯ জন নার্স রয়েছে। তাদের মধ্যে চার জন প্রশিক্ষণে ও দুই জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং দুই জন ইনচার্জে দায়িত্ব পালন করছেন। ৩৭৭ জন আউটসোর্সিং জনবলের মধ্যে ৯০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আয়া, সুইপার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাবে হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা রোগীদের পাশেই রাখা হচ্ছে। দুর্গন্ধে শৌচাগারে প্রবেশ করা যায় না।

স্থানীয়রা জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নামে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও পুরোপুরি চিকিৎসা দেওয়া শুরু না হওয়ায় টাঙ্গাইলের ৪০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রোগীদের ঢাকাসহ আশপাশের বিভাগীয় শহর থেকে কাঙ্খিত সেবা নিতে হচ্ছে। ফলে আশঙ্কাজনক রোগী ও স্বজনরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুরোপুরি মানসম্মত চিকিৎসা সেবা চালু করার দাবি জানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় বহিঃবিভাগের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে রোগীদের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। তাদের মধ্যে কালিহাতী উপজেলার পাইকরা গ্রামের কামরুল হাসান জানান, টাঙ্গাইলের গণমানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে টাঙ্গাইলে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র জনবল সঙ্কটের কারণে তারা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না। ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় সহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি হাসপাতালে দ্রুত পুর্নাঙ্গ চিকিৎসা সেবা চালুর দাবি জানান।

ভবনের লিফট ও আশপাশের দেওয়ালে পানের পিক ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। ধুলাবালির কারণে ভবনের বিভিন্ন গ্রিলে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। ভবনের ১০ম তলায় মেডিসিন বিভাগে নারী ও পুরুষ রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্র্ডে ৮৪টি নির্ধারিত বিছানা বরাদ্ধ থাকলেও অতিরিক্ত মিলে প্রায় আড়াইশ’ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের বিছানার পাশে ও শৌচাগারসহ বিভিন্ন কক্ষের সামনে ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে। উৎকট দুর্গন্ধে শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত বিছানার পাশাপাশি মেঝেতে বিছানা পেতে নারী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও ময়লা-আবর্জনার একইচিত্র বিদ্যমান। হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনের দেওয়ালের টাইলস খসে পড়ছে। তার সামনের কক্ষের দরজার হাতল ভাঙা। এছাড়া দরজায় কাঠের জোড়ার অংশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষসহ বিভিন্ন দেওয়ালের টাইলস খসে পড়ছে।

টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেখানে হাসপাতাল ভবনসহ ২৭টি ভবনের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। বাকি ১০৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আলী খান জানান, হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা পুরোপুরি চালু করতে পর্যাপ্ত জনবলের প্রয়োজন। জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ে বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। জনবল পেলেই পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি মো. ছানোয়ার হোসেন এমপি জানান, হাসপাতালে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি সবই আছে। কিন্তু জনবলের অভাবে পুরোপুরি স্বাস্থ্য সেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতালের সভাপতি কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি’র সভাপতিত্বে একটি সভা করার পর আর কোন সভা এখনও হয়নি। দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা কেউ দায়িত্ব পালন করেননি।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।