একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ বছর আগে স্ত্রী সৈয়দ আমেনা পিংকিকে হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে টাঙ্গাইল থানায় মামলা করা হয়েছে।আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন মামলা করার বিষয় নিশ্চিত করে জানান, এ হত্যা মামলায় মোর্শেদকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানোর জন্য বৃহস্পতিবার(২৩ সেপ্টেম্বর) আদালতে আবেদন করা হবে।
মোর্শেদকে পুলিশ গত ১৯ আগস্ট একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করে। পরে ওই দিনই তার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে দুইটি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়। তিনি অস্ত্র ও চাঁদাবাজি মামলায় বর্তমানে টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছেন।
মোর্শেদ ছাড়াও হত্যা মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সোমা ওরফে মনা, মুন্সি তারেক পটন ও তার স্ত্রী লিনা, পারভেজ খান রনি, সোহেল ওরফে বাবু, অনন্ত সুত্রধর, রাফসান ও আয়নাল মিয়া। এরা সবাই শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাসিন্দা। মামলায় এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও তিন চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রী সৈয়দ আমেনা পিংকির বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বাদি হযে গত ২৪ আগস্ট টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে সৈয়দ আমেনাকে মোর্শেদ অপহরণ করে বিয়ে করেন। তাদের ছয় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারে মাঝে মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে ওই এলাকার এক বাসায় দাওয়াতের কথা বলে মোর্শেদ আমেনাকে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় মোর্শেদ তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করেন। মোর্শেদের ভয়ে তিনি মামলা করতে সাহস পাননি। পরে মোর্শেদ ১৯ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আদালত এ হত্যার বিষয়ে থানায় কোন মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল কিনা তার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। কোন মামলা বা জিডি হয়নি বলে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আদালত মামলা করার জন্য টাঙ্গাইল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, এ হত্যা মামলায় মোর্শেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তদন্তের প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, মোর্শেদ টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিতেন। পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোর্শেদের বিরুদ্ধে করা ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী এক ডজন মামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।