টাঙ্গাইলে অধিকাংশ নদীতে বাড়ছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা


০৮:২৩ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
টাঙ্গাইলে অধিকাংশ নদীতে বাড়ছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা - Ekotar Kantho
টাঙ্গাইলে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে পাহাড়িয়া এলাকায় আত্মীয়ের বাড়ি ও উঁচু সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অধিকাংশ এলাকায় পানীয় জল ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় মাত্র ৪০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দিয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, কালিহাতী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৭টি, নাগরপুর উপজেলার ৯টি, বাসাইল পৌরসভা সহ সবকটি(৬টি) ইউনিয়ন, মির্জাপুর ৪টি ও দেলদুয়ার উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে খাল, বিল, নদী ও বাড়ির আঙিনা পানিতে থই থই করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধের উত্তর-পূর্বাংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাছ বেথইর এলাকায় বাঁধের ১০০মিটারে ভাঙনের কবলে পড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করলে টাঙ্গাইল শহরে পানি ঢুকে পড়বে। এছাড়া যমুনায় ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর অংশে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

20230826-141431

বন্যার পানিতে টাঙ্গাইল-পটলবাজার, টাঙ্গাইল-কাকুয়া, এলেঙ্গা-মগড়া, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার থেকে ভালকুটিয়া পর্যন্ত পাকা সড়ক, বাসাইল পৌরসভার একটি ব্রিজ ও কাঞ্চনপুরের গ্রোথ সেণ্টার-কাজিরাপাড়া সড়কে কালভার্ট প্রবল স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওইসব এলাকায় এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ৭৯০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এদিকে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও ধলেশ্বরী, ঝিনাই সহ অভ্যন্তরীণ সব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেণ্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেণ্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর এ চারটি উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৪০ মে.টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে যথাস্থানে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, চলতি বন্যার পানি এক সপ্তাহের মধ্যে নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৯০ হেক্টর জমির রোপাআমনের ৫০-৬০ ভাগ ধান রক্ষা পেতে পারে। তিনি জানান, পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নাভি জাতের আমন রোপনের জন্য তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার পাশাপাশি আগাম রবিশস্য চাষে সহায়তা দিয়ে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যায় পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলার ৮০ কিলোমিটার নদী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। পানি কমে গেলে স্থায়ীভাবে নদী তীর সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মতামত

-মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।