একতার কণ্ঠ ডেস্কঃ টাঙ্গাইলে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন পবিত্র রমজানে প্রতিদিন প্রায় তিন শতাধিক দরিদ্র মানুষের মধ্যে ইফতারি বিতরণ করছে। গত ৭ বছর ধরে টাঙ্গাইল ছাড়াও দেশের আরও ১১ জেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশ নিয়ে আসছে সংগঠনটি।এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার(২৯ এপ্রিল) বিকালে টাঙ্গাইল সদরে ঘুরে ঘুরে প্রায় তিন শত জন দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার বিতরন করেন সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা।
শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মঈদ হাসান তড়িৎ জানান, গত ৭ বছর ধরে টাঙ্গাইল ছাড়াও দেশের আরও ১১ জেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে বিভিন্ন মানবিক কাজে অংশ নিয়ে আসছে সংগঠনটি। তারই ধারাবাহিকতায় নিজেরা রান্না করে টাঙ্গাইলের রাস্তায় ছিন্নমূল অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে খুঁজে খুঁজে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ১১টি জেলায় প্রায় ৯ হাজার মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলা সদর বস্তির বাসিন্দা শাহিদা বেগম (৫০)। প্রায় ৩৫ বছর আগে বিয়ে হয়। স্বামী রিকশা চালক। বিয়ের পর থেকেই সংসারে সুখের টানাটানি।
একে একে তাদের সংসারে এলো তিন মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ের পর তারা স্বামীর বাড়িতে বসবাস করেন। ছেলেও বিয়ের পর পৃথক হয়েছে। এদিকে প্রায় ১৫ বছর ধরে স্বামী ভরণপোষণ দেন না।
অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলে তার। টানাটানির সংসারে ভালো মানের খাবার জোটানো স্বপ্নের মতো লাগে। কোনো রকম সেহেরি ও ইফতার খেয়ে রোজা রাখেন।
এ অবস্থা দেখে তার পাশে দাঁড়িয়েছে ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’ সংগঠন। প্রতিদিন তাকে ভাল মানের ইফতার সামগ্রী দেওয়া হয়।
শুধু শাহিদা বেগম নয়, তার মতো প্রতিদিন টাঙ্গাইল শহরের অসহায় তিন শতাধিক দরিদ্র মানুষকে খুঁজে খুঁজে ইফতার সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন’ নামের এই সংগঠনটি।
শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে দেখাশোনা করেন না। ছেলেও খোঁজ খবর নেয় না। নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলি। ভালো মানের ইফতার কখনও তৈরি করতে পারি না। শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন আমাকে প্রতিদিন অনেক ভালো মানের ইফতার সামগ্রী দেয়। তাদের জন্য দোয়া করি। তারা যেনো আমার মতো মানুষের পাশে সবসময় এভাবেই দাঁড়াতে পারে।’
ইফতার সামগ্রী পাওয়া বস্তিবাসী রত্না বেগম বলেন, ‘রোজার শুরু থেকে তারা ইফতার সামগ্রী দিচ্ছে। এমন ইফতার সামগ্রী বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের দেওয়া ইফতার সামগ্রী দিয়ে পরিবারের সবাই মিলে আমরা ইফতার করি।’
হাসনা বেগম বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে আয় রোজগার বন্ধ। অনেকের ঘরে খাবার নেই। আবার অনেকেই খাবার পায় না। এই খাবার পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। খাবার পেয়ে অনেকেই খুশিতে কেঁদে ফেলেছে।’
কদবানু বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে টাকা তুলি। কিনে ইফতার খেতে হয়। আজ বানানো ইফতার পেয়ে খুব আনন্দিত।
রিকশা চালক হারুন মিয়া বলেন, ‘সারাদিন রিক্সা চালিয়ে শহরের শহীদ মিনারে এসে বসলে শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের লোকেরা ইফতার দিয়ে যান। কোনো দিন বিরিয়ানি আবার কোনো দিন খিচুড়ি দিয়ে থাকেন। আবার কোনো দিন ছোলা, মুড়ি, খেজুর দেন।’
স্বেচ্ছাসেবক কাজী সিনথিয়া জেরিন বলেন, ‘শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে। মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করাও মানবতা। ছিন্নমূল মানুষকে ইফতার করিয়ে নিজেদের ইফতার করার মধ্যে এক আত্মতৃপ্তি থাকে। ছিন্নমূল মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।’
অপর স্বেচ্ছাসেবক তানজিলা ইসলাম সেমন্তি বলেন, ‘এই কাজটা করতে আমাদের অনেক ভাল লাগে। মানুষের পাশে দাঁড়ালে তারাও আমাদের ভালবাসে এবং আমাদের জন্য দোয়া করেন। তারা দোয়া পাওয়াই অনেক বড় ব্যাপার।’
স্বেচ্ছাসেবক তাহমিদ সাম্য বলেন, ‘আমরা যখন ইফতার বিতরণ করি ছিন্নমূল মানুষগুলো অনেক খুশি হয়। মন থেকেই আমাদের জন্য তারা দোয়া করেন। মানুষের ভালবাসা পেয়ে আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি। নিজ বাসায় ইফতার করা বাদ দিয়ে ছিন্নমূল মানুষের সাথে ইফতার করি। তাদের সাথে ইফতার করতে আমাদেরও ভাল লাগে। সারাদিন রোজা রাখার পর আমাদের ইফতার পেয়ে তারা যে হাসি দেয়। সেই হাসি দেখার জন্য বাড়ি থেকে তাদের কাছে ছুটে আসি।’
মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, ‘লকডাউন উঠে গেলে মার্কাস মসজিদ ও এতিমখানায় ইফতারের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়াও ঈদের আগের দিন ছিন্নমূল মানুষের বাড়িতে বাড়িতে চাল, ডাল, সেমাই, মাংস, দুধ চিনিসহ ঈদ বাজার পৌঁছে দেওয়া হয়। এ বছরও দেওয়া হবে। ছিন্নমূল শিশুদের জন্য ঈদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়। এ বছর প্রায় এক হাজার শিশুকে ঈদের নতুন পোশাক দেওয়া হবে। সবার সহযোগিতায় আগামী বছরগুলোতেও এমন আয়োজন করা হবে। এমন কাজে সামর্থ অনুযায়ী সবার সহায়তায় এই মানুষগুলির পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানাই।