একতার কণ্ঠঃ অবশেষে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের মধ্যদিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৬ নেতার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর)সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে আয়োজিত এক বিশেষ সাধারন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারার সংশোধন করা হয়।
এছাড়াও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থানীয় পত্রিকার দুই সম্পাদকের সদস্যপদ বাতিল হওয়ার ফলে তাদের মনোনীত আরো দুইজনের সদস্যপদও বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে, সাপ্তাহিক মৌবাজার পত্রিকার সম্পাদক সাত্তার উকিল প্রায় তিন বছর আগে মুত্যুবরণ করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ পত্রিকার কোঠায় সদস্যপদ লাভ করা আরো একজনের সদস্যপদ বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদ্যপ্রয়াত ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ ও কার্যকরী সদস্য সুজয় দেব এবং শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি।
এছাড়াও, দৈনিক দেশবাসী পত্রিকার কোটায় সদস্যপদ পাওয়া নিলুফা ইয়াসমিন স্নিগ্ধা, দৈনিক টাঙ্গাইল সময় পত্রিকার মোজাম্মেল হক ও সাপ্তাহিক মৌ বাজার পত্রিকার আশিকুর রহমান পলাশ।
এই সংশোধনের ফলে প্রেসক্লাব রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠনে পরিনত হবে বলে ধারনা করছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সচেতনমহল।
জানা গেছে, ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের গত ১৬ বছর ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবকে কার্যত জেলা আওয়ামী লীগের বিকল্প কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ওই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তিন এমপিসহ শীর্ষ ৬ নেতা সদস্যপদ লাভ করেন। সে সময় জেলার টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বানিজ্য, মনোনয়ন বানিজ্য, দলীয় পদ বানিজ্যসহ সকল ধরনের অপকর্মের আস্তানায় পরিনত হয় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব।
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন এসব অপকর্মের প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের নির্যাতিত ও বঞ্চিত সাংবাদিকসহ জেলায় কর্মরত বিক্ষুদ্ধ সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এ সময় সাংবাদিকরা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রেসক্লাব এবং প্রেসক্লাবকে সাংবাদিক বান্ধব করতে গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনসহ ব্যাপক সংস্কারের দাবিতে নানা কর্মসুচি পালন ও আল্টিমেটাম দেয়।
এরই প্রেক্ষিতে প্রেসক্লাবের জৈষ্ঠ্য সাংবাদিকরা গঠনতন্ত্র সংস্কারসহ নানা উদ্যোগ গ্রহন করেন। পরে প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদ বিশেষ সাধারন সভা আহবান করে।
এর আগে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান খান আজাদকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, প্রেসক্লাব সদস্য ও দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি কামনাশীষ শেখর এবং প্রেসক্লাবের সদস্য ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক মির্জা শাকিল।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের সঞ্চালনায় এই বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন- টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট জাফর আহমেদ।
সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক বিমান বিহরী দাস, খান মোহাম্মদ খালেদ, আতাউর রহমান আজাদ, শামসাদুল আখতার শামীম, মাহমুদ কামাল, আবু রায়হান খান, কামনাশীষ শেখর, মির্জা শাকিল, মহব্বত হোসেন, সোহেল তালুকদার প্রমুখ।