একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে একই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে কু-প্রস্তাব ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে উপজেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
কাজী জহুরুল ইসলাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই শিক্ষিকার পরিবারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটিসহ শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওই বৈঠকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলাম শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করার বিষয়টি স্বীকার করেন।
জানা যায়, উপজেলার অর্জুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলাম বিগত ২ বছর ধরে একই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষিকাকে বিভিন্নভাবে অনৈতিক কাজের জন্য বারবার কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। পরে তার ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে ওই শিক্ষিকা আভ্যন্তরিণ ভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেন। পরে এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের অন্য সহকর্মীদের বিষয়টি জানানো হয়। পরে ঘটনার বর্ণনা শুনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একত্রিত হয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সামনেই ওই শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন। বিষয়টি ওই শিক্ষিকার পরিবার পর্যায়ে যাওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। পরবর্তিতে প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে অভিযোগ জানান ওই ভুক্তভোগী শিক্ষিকা। শুধু ওই শিক্ষিকাই নয় তার আরও কয়েকজন শিক্ষিকাকে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার বিকেলে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈবুর রহমান, নুরুল ইসলাম খান জোসনা এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলাম, অভিযোগকারী শিক্ষিকাসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকরা। এ সময় প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলাম সবার সামনে নিজের দোষ স্বীকার করেন।
অজুনা মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকারা জানান, প্রধান শিক্ষক তার ক্ষমতা ব্যবহার করে নারী শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করে। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হলে ওই শিক্ষিকার সাথে খারাপ আচরণ করেন জহুরুল ইসলাম। একই সাথে তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক হওয়ায় তার ভয়ে অনেকেই প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষিকাকে ওই প্রধান শিক্ষক গভীররাতে মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসেস পাঠাতো। পরে বাধ্য হয়ে এক শিক্ষিকা তার বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির বরাবর অভিযোগ দিয়েছে যেটা সত্য।
অভিযোগকারী শিক্ষিকা জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করতো সব সময়। ম্যাসেস, মোবাইলে এবং সরাসরি কু-প্রস্তাব দিতো প্রধান শিক্ষক। মোবাইলে টাকাও পাঠিয়েছিল। এটি নিয়ে পারিবারিকভাবেও ঝমেলার সৃষ্টি হয়েছে। পরে সহকর্মীদের কাছে বলার পরও ওই প্রধান শিক্ষক ভাল হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে ম্যানেজিং কমিটি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত অজুর্না মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী জহুরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া বিদ্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
অজুর্না মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, শিক্ষিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকেলে মিটিং করা হয়েছে। মিটিংয়ে প্রধান শিক্ষক তার দোষ স্বীকার করেছেন। পরবর্তিতে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।