টাঙ্গাইলে নিষিদ্ধ পলিথিনের জব্দকৃত ট্রাক টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ


১১:২৪ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৪
টাঙ্গাইলে নিষিদ্ধ পলিথিনের জব্দকৃত ট্রাক টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ: টাঙ্গাইলে রাতে পলিথিন বোঝাই কাভার্ডভ্যান জব্দ করার পর টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৫ মার্চ) রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের সদর উপজেলার তারটিয়া এলাকা থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ড ভ্যান জব্দ করেন সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন। পরে কতিপয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেনদরবার শেষে মঙ্গলবার দুপুরে জব্দ করা কাভার্ডভ্যানটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি নিষিদ্ধ পলিথিন আটকের পর অবৈধ সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। আর সচেতন মহলের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে তিন গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধেও। এসআই ট্রাক জব্দের বিষয়টি স্বীকার করলেও অন্য সকল অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা পুলিশের সদস্যরা জানান, সোমবার দিবারগত রাতে মধুপুর ট্রান্সপোর্টের নামের নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ডভ্যান ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের তারটিয়া এলাকায় পৌঁছলে টাঙ্গাইল সদর থানার এসআই মো. বেল্লাল হোসেনের টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই কাভার্ডভ্যানটি আটক করে। পরে কাভার্ড ভ্যানে নিষিদ্ধ পলিথিন থাকায় তা জব্দ করে ভোর রাতেই থানায় নিয়ে আসে। এরপর থেকেই শুরু হয় তদবির। এ কাজে যোগ দেন দুই মিশ্র টেলিভিশনের প্রতিনিধিসহ তিন গণমাধ্যমকর্মী।তিনি জানান, শহরের ছয়আনী বাজারের আনোয়ার হোসেন পলিথিন ব্যবসায়ী এবং কালিহাতীর দুই সংবাদকর্মী ও টাঙ্গাইলের এক গণমাধ্যমকর্মী নিষিদ্ধ পলিথিনবাহী কাভার্ড ভ্যানটির মালামালসহ ছাড়িয়ে নিতে ভোর রাতেই থানায় উপস্থিত হন। পরে দেনদরবার শেষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তা মালামালসহ মঙ্গলবার দুপুরে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হন।জানা গেছে, এ ঘটনায় পুলিশ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেয়। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে জেলার এক মিশ্র টেলিভিশনের গণমাধ্যমকর্মী ঢাকার অফিসের টিমের কথা বলে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। অন্য দুইজন পেয়েছে বাকী টাকা। টাকার এই অসম ভাগাভাগি নিয়েও মনোমালিন্য হয় তাদের মধ্যে।

এদিকে ট্রাকটি ছাড়িয়ে নেওয়ার পর থানা পুলিশের ভেতর থেকেই ঘটনাটি জানাজানি হয় সর্বত্র। জানাজানির পর বইতে থাকে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড়।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার সাবেক কর্মকর্তা ও পরিবেশ কর্মী সোমনাথ লাহিড়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পরিবেশের জন্য মরণঘাতী এ পলিথিন উচ্চ আদালতে উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাত করণ এবং ব্যবহারে নিষিদ্ধ পণ্য। নিষিদ্ধ পণ্য জব্দের পর তা ধ্বংস না করে ছেড়ে দেয়া অতীব গর্হিত কাজ। এ কাজের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চরমভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই।

এ বিষয়ে মধুপুর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির ম্যানেজার মো. কায়ছার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমাদের গাড়িতে এ ধরনের মালামাল বহন করা হয় না।
তিনজন গণমাধ্যম কর্মীর একজন বলেন, ভোর রাতে এক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে প্রাইভেটকারযোগে মহাসড়কে চা খেতে গিয়েছিলাম। তখন ট্রাক জব্দের কথা জানতে পেরে এসআই বেলালকে অবহিত করলে তিনি অস্বীকার করেন। যে তিন লাখ টাকা লেনদেনের কথা হচ্ছে, আমি এ বিষয়সহ কোন কিছুই জানি না।

সদর থানার উপপরির্দশ (এসআই) মো. বেল্লাল হোসেন জানান, পলিথিনের ট্রাকটি আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। পরে আর কিছু জানি না। সব জানে ওসি স্যার। ওসির সাথে আপনারা কথা বলেন। এটা নিয়ে খুবই প্যারায় আছি।

সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লোকমান হোসেন জানান, এধরণের কোন ট্রাক আটক বা জব্দ করা হয়নি। তবে রাতে মাটিবাহী একটি ট্রাক আটক করা হয়েছিল। থানায় চর্তুদিকে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। থানায় আনার পর সেই ট্রাক ছাড়ার সুযোগ নেই। হয়ত ভুলভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন জানান, সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


নিউজটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।