একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত শর্তসাপেক্ষে সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে তিনি টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন। টাঙ্গাইলের জেল সুপার মোখলেসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জামিনে মুক্ত হয়ে সাবেক মেয়র পৌর শহরের কলেজ পাড়ার নিজ বাসভবনে ফিরেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
টাঙ্গাইলের জেল সুপার জানান,উচ্চ আদালতের জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র বুধবার টাঙ্গাইল কারাগারে পৌঁছলে সকল নিয়ম মেনে দুপুরে তাকে জেল থেকে সাবেক মেয়রকে মুক্তি দেওয়া হয়।এরআগে সোমবার হাইকোর্টের ৯ নম্বর আদালতের বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ফারুক হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
সহিদুর রহমান খান মুক্তির আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আব্দুল মুনতাকিম জানান, বিচারকদ্বয় টাঙ্গাইলের ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তথ্যগোপন করে জামিন আবেদন করায় সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে তথ্য গোপন করে জামিন আবেদন করার অভিযোগে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সহিদুর রহমান খান মুক্তি গত এপ্রিলে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে জামিন চেয়ে আবেদন দাখিল করেন। এই আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত জুন মাসে জামিন চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন। জামিন চেয়ে আগে করা আবেদনের তথ্য দ্বিতীয় দফায় করা আবেদনে উল্লেখ না করায় আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে।একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ছোট ভাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনার ৩ দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যান।
আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর হাজতবাসের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। অভিযুক্ত সহিদুর রহমান খান মুক্তি দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর দফায় দফায় জামিনের আবেদন করলেও আদালত প্রতিবারই আবেদন নামঞ্জুর করেন। তাদের অন্য দুই ভাই এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন।