টাঙ্গাইলে শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিলেন প্রধান শিক্ষক


০৯:৫৫ পিএম, ২২ অগাস্ট ২০২৩
টাঙ্গাইলে শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিলেন প্রধান শিক্ষক - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের গোপালপুরের একটি বিদ্যালয়ে এক শিক্ষককে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। নোটিশ পাওয়া ওই শিক্ষকের নাম রনি প্রতাপ পাল। তিনি উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিয়ে করার জন্য গত ২৬ জুলাই লিখিত নোটিশ দেন।

ওই নোটিশের বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষককে নানাভাবে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় নানা আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রনি প্রতাপ গোপালপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই তিনি এমপিওভুক্ত হন।

20230826-141431

নোটিশে বলা হয়, আপনি গত ৬/১১/২০১৬ তারিখ এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম শিক্ষা) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর অবগত হলাম, আপনি অবিবাহিত রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিবাহ করার জন্য। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, যোগদানের কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আপনি বিবাহ করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকগণ অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহকার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

নোটিশ পাওয়ার দুই দিন পর শিক্ষক রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন। লিখিত জবাবে তিনি বলেন, আমার অভিভাবকেরা আমার বিয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের বিয়ের পাত্রপাত্রী বাছাইয়ে গোত্র বা বর্ণের বিষয় রয়েছে। এ ছাড়া হিন্দুধর্মাবলম্বীরা শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত বিয়ে করাটা শুভ মনে করে না। সুতরাং পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকেরা আমাকে বিবাহ করাবেন বলে জানিয়েছেন।

রনি প্রতাপ বলেন, জবাব দেওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক তাঁকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিতে শুরু করেন। পরে তিনি বিষয়টি তাঁর অন্য সহকর্মী এবং অন্যদের জানান। রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি জানান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনো কারও কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। কিন্তু বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে চেকের মাধ্যমে স্কুলের বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চলমান সরকারি তদন্তে যাতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দিই, সে জন্য আমাকে বিয়ের নামে চাপাচাপি ও হয়রানি করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, রনি প্রতাপ ভালো শিক্ষক। তাঁকে নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন তোলেননি। অথচ দুটি সরকারি তদন্তে মিথ্যা সাক্ষী দিতে না চাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাঁকে এমন একটি নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছেন।

নোটিশের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, রনি প্রতাপের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে সহশিক্ষা চলমান রয়েছে, এমন প্রতিষ্ঠানে কোনো অবিবাহিত শিক্ষক থাকলে নানা অসুবিধা হতেই পারে। নানা অনৈতিক কিছু ঘটতেও পারে। এ জন্য তাঁকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা জানান, ঘটনাটি খুবই লজ্জাজনক। এভাবে নোটিশ করার এখতিয়ার কোনো প্রধান শিক্ষকের নেই। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) তিনি বিদ্যালয়টিতে গিয়েছিলেন। এই নোটিশ দেওয়ার ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কয়েক বছরের। এটি তদন্তের জন্য সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আহ্বায়ক এবং অন্য দুটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সদস্যসচিব করে একটি তদন্ত কমিটির প্রস্তাব করা হবে।

টাঙ্গাইল শহরের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, বিয়ে করা না-করা মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। রনি প্রতাপকে বিয়ে করার জন্য প্রধান শিক্ষক যে নোটিশ দিয়েছেন, তা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এমন নোটিশ দেওয়া অনৈতিক।


পাঠকের মতামত

-মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।