একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীরবাসিন্দা এবং পারখী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ১৭ জুলাই সোমবার। এ নির্বাচনে নৌকার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বহিষ্কার করা হয়েছে বিদ্রোহী ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে অদৃশ্য বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর। প্রার্থীরা শেষ সময়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট পেতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেকের শংকাও রয়েছে।
জানা যায়- ২০১১ সালে বীরবসিান্দ ইউনিয়ন ভেঙে পারখী নামের নতুন একটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। এবার নির্বাচনে বীরবাসিন্দা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আব্দুল খালেক (নৌকা)। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ ইউনিয়নে আরো ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম শিকদার (আনারস) ও বর্তমান চেয়ারম্যান ছোহরাব আলী (মোটরসাইকেল সাইকেল) এবং মিতু আক্তার (চশমা)।
এদিকে পারখী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান তালুকদার তোতা (নৌকা)। তিনি কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এ ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী তালুকদার (মোটর সাইকেল)। এছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হয়েছেন আব্দুস সবুর শামীম (গামছা)।
এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বীরবাসিন্দা ইউনিয়নে একাধিক মারামারি ও অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন এবং লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ছোহরাব আলীর বলেন, আমার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়ক আরিফুর রহমান লিটনকে (৫০) কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। কস্তুরীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিটন এখন ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও নির্বাচনী অফিস ও গাড়ী ভাংচুর করে প্রচারনায় বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের কস্তুরীপাড়া জামে মসজিদের সামনে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজাফৈর বাজার এলাকায় এ ঘটনা দুটি ঘটে।
ছোহরাব আলী আরো বলেন, আমি নির্বাচন অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। তিনি আমাকে নিরেপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়া একই ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাতে সিংনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক শরীফ আহমেদ রাজুসহ ৫ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়েছে।
আহতরা বলেন, হামলাকারীরা বর্তমান চেয়ারম্যান ছোহরাব হোসেনের লোকজন।
কালিহাতী থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আলামিন বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাতেই রকিবুল ইসলাম সুমন বাদী হয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ছোহরাব হোসেনকে প্রধান আসামী করে ৪৩ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। হেলাল উদ্দীন নামের এক আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচন করায় ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সেইসাথে চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন বীরবাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছোহরাব আলী, একই ইউনিয়নের উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সেলিম সিকদার ও পারখী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী তালুকদার। তাদেরকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল খালেক ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান তালুকদার তোতা বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে ৪ টি অভিযোগ দিয়েছেন। সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সকল পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা কালিহাতীতে এসে বৃহস্পতিবার মতবিনিময় করেছেন। সেখানে পুলিশ প্রশাসন ও প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কোন প্রকার শংকা নেই। বীরবাসিন্দা ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৭০৫ এবং পারখী ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৫৮৪ জন।