টাঙ্গাইলে মেয়ের খুনি বাবা, জানা গেল ৭ বছর পর


০৮:৪৪ পিএম, ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
টাঙ্গাইলে মেয়ের খুনি বাবা, জানা গেল ৭ বছর পর - Ekotar Kantho
নিহত পারুল, জামাতা ও ঘাতক বাবা

একতার কণ্ঠঃ নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর পারুল আক্তার। তাঁর বাবা সেই বিয়ে মেনে নেননি। ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় এসে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন পারুল ও তাঁর স্বামী নাছির উদ্দিন ওরফে বাবু। দুজন যা বেতন পেতেন, তা দিয়ে তাঁদের সংসার খুব ভালোভাবে চলত না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হতো। বিয়ের তিন বছর পর ঝগড়া করে স্ত্রীকে বাসায় রেখে বেরিয়ে যান নাছির। পারুল তাঁর বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা বলেন।

মেয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ বাবা মেয়েকে বাড়ি ফিরতে বলেন। বাবার কথায় স্বামীর সংসার ছেড়ে গ্রামে চলে যান পারুল। এবার ক্ষুব্ধ বাবা নিজের ও পরিবারের অসম্মান করায় মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পারুলের বাবা আ. কুদ্দুস খাঁ মেয়েকে ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাঙ্গাইল থেকে জয়পুরহাটে নিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কুদ্দুসের সঙ্গে তাঁর বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মণ্ডলও যান।

সেখানে যাওয়ার পর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে তাঁর বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেন।

20230826-141431

২০ জানুয়ারি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মেয়ে হত্যার এমন লোমহর্ষক, বর্বরোচিত বিবরণ তুলে ধরেন আ. কুদ্দুছ খাঁ। তিনি এখন কারাগারে। তাঁর দেওয়া জবানবন্দি আজ রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। এ সংবাদ সম্মেলন হয় ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, পারুল সব ভাইবোনের মধ্যে মেধাবী ছিলেন। স্কুলে তাঁর রোল নম্বর ছিল ২। দেখতেও ছিলেন সুন্দরী। বাবা কুদ্দুসের স্বপ্ন ছিল মেয়েকে শিক্ষিত করবেন। কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা ক্ষুব্ধ হন।

বনজ মজুমদার বলেন, তখন থেকেই কুদ্দুসের পরিকল্পনা ছিল মেয়ে তাঁকে যে অসম্মান করেছে, তাতে তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। মেয়ের বিয়ের তিন বছর পর সেই সুযোগ পেয়ে তিনি তাঁর বন্ধুর সহযোগিতায় মেয়েকে হত্যা করেন। কুদ্দুসের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোকাদ্দেছকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মেয়েকে হত্যার পর কুদ্দুসের মধ্যে আরেকটা বিষয় কাজ করছিল যে তাঁর মেয়ের এই পরিণতির জন্য নাছির দায়ী। তাঁকেও শাস্তি দিতে হবে। তাই মেয়ের জামাইকে ফাঁসাতে একের পর এক মামলা করেছেন তিনি। রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় থানা–পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই পুলিশ প্রতিবেদন দেন। মেয়ের বাবাও বারবার নারাজি দেন।

পিবিআই জানায়, পারুলের বাবা শুরুতে অপহরণ ও গুমের মামলা করলেও সর্বশেষ তিনি আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত আবার পিবিআইকে দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে ২০১২ সালে মেয়ের বাবার করা সাধারণ ডায়রিতে দেওয়া একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়।

পিবিআই জানায়, মেয়েকে হত্যার পর নাছিরকে শাস্তি দিতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে তিনি মামলা চালিয়েছেন। এর জন্য তিনি নিজের জমিও বিক্রি করেছেন।


পাঠকের মতামত

-মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।