একতার কণ্ঠঃ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পালিত হচ্ছে বিএনপি’র ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।গত বছর ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি চমৎকার মাল্টি কালার পোস্টার করা হয়, সেখানে দলের প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি ছবি দেওয়া হয়, মূল বিষয়টি হলো সেই পোস্টার লেখা হয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সততাই আমাদের প্রেরণা। এতোবছর পরেও কিন্তু শহীদ জিয়ার সততাকেই সামনে নিয়ে আশা হয়েছে। সত্যি কথা জিয়াউর রহমানের সততা বিশ্বব্যাপী সর্বজন স্বীকৃত। আজ বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময়কালে দুটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো।
১৯৭৮ সালের পহেলা জানুয়ার জাতীয়তাবাদী অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন হবে ৩২ নম্বর পুরানা পল্টনে। শরীক দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ অফিসে এসে আগেই উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিনিয়র নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার,গোলাম হাফিজ, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মতিন চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আকবর হোসেন,ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ডাক্তার আব্দুল মতিন ও ফিরোজ নুন। কেন্দ্রীয় অফিসে জিয়া আসলেন বুশশার্ট প্যান্ট ও চোখে সানগ্লাস পরা অবস্থায়, অবশ্য মাথায় সাদা ক্যাপ ছিল। কার্পেট বিছানো ফ্লোরে পূর্বেই আগত সবার সাথে বসে পড়লেন এবং মোনাজাতে অংশগ্রহণ করলেন।মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ভাসানী ন্যাপ, বিচারপতি আব্দুল সাত্তার সাহেব, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আকবর হোসেনের ইউপিপি, লেবার পার্টির মাওলানা আব্দুল মতিন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শাহ আজিজ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির এস এম সোলাইমান নেতৃত্বে গঠিত হলো জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জাগদল এর চেয়ারম্যান হিসাবে মনোনীত করা হলো এবং ১৯৭৮ সাল ২৩ জুনের নির্বাচনের তাকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনীত করা হলো।অন্যদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওসমানী সাহেব কে। মোনাজাত পর্ব শেষ হলে প্রেসিডেন্ট জিয়া আগত সকল নেতৃবৃন্দর সাথে করমর্দন করেন, কুশল বিনিময় করেন,আলোচনা করেন। ২৩ জনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কর্মপন্থা নিয়ে বিশদ আলোচনা চলছিল, তখন পাশে বায়তুল মোকাররম থেকে জোহরের নামাজের আযানের শব্দ শোনা গেল, জিয়া বাইতুল মোকাররমের নামাজ পড়তে যাবেন তাই সবার সাথে হাত মিলিয়ে বিদায় নিলেন । জেনারেল জিয়া চললেন মোকাররম মসজিদের দিকে। পল্টনের প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি বাসাবাড়ির জানালা, বারান্দা অফিসগুলোর ছাদ থেকে তাকে দেখার জন্য, অভিবাদন জানানোর জন্য দাঁড়িয়েছিল সকল শ্রেণীর মানুষ । এদেশ সকল মানুষের তিনি কাছে কতটুকু প্রিয় ছিলেন এটা তাই প্রমাণ করে। মানুষের ভালবাসা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
আরেকটি আলোচিত ঘটনা উল্লেখ করছি।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। রাজধানী ঢাকার রমনা রেস্তোরার পাশে প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আসলেন এই অনুষ্ঠানে, অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যান ব্যক্তিত্ব আগে থেকে এসে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চের সামনে আছেন রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। শহীদ জিয়া বক্তৃতা করলেন এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলটির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করলেন। দলটির চেয়ারম্যান হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১১ জন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যের নাম ঐদিন ঘোষণা করলেন।
১)প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- চেয়ারম্যান, ২)
বিচারপতি আব্দুল সাত্তার ভাইস- চেয়ারম্যান, ৩)ডাক্তার বদরুদ্দোজা চৌধুরী- মহাসচিব, ৪) শাহ আজিজুর রহমান – সদস্য ৫)ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার- সদস্য, ৬) ডাক্তার ইউসুফ আলী- সদস্য( চট্টগ্রাম), ৭)শেখ রাজ্জাক আলী-সদস্য ( খুলনা) ৮)প্রফেসর একরামুল হক -সদস্য( রাজশাহী, সাবেক ডাকসু ভিপি)৯) সৈয়দ মহিবুল হাসান – সদস্য(সিলেট) ,১০) আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী -সদস্য( বরিশাল বর্তমানে পটুয়াখালী),১১)ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা-সদস্য। কর্নেল আলাউদ্দিনকে স্ট্যান্ডিং কমিটি সচিব হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাংবাদিকরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে আলোচনা করলেন, প্রশ্ন উত্থাপন করলেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল আপনি সৎ ব্যক্তি, পার্টি চালানোর টাকা কোথায় পাবেন? প্রেসিডেন্ট জিয়া উত্তরে বললেন money is no problem if you work in the interest of the people the country. এভাবেই জন্ম হলো বিএনপি’র।
ইতিপূর্বে ১৯৭৮ সালের ২৮ আগস্ট মাসে জাগদল বিলুপ্ত করা হয়। চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী নতুন দলটির নাম প্রস্তাব করেছিলেন জাস্টিস পার্টি হিসেবে। কিন্তু দলটির তেমন দুধসুই হয়নি বিদায় এবং জাতীয়তাবাদী শব্দটি যুক্ত না থাকায় গ্রহণ করা হয়নি। অবশেষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেই নবগঠিত দলটির নামকরণ করেন “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

লেখক – প্রফেসর ড.জি.এম. শফিউর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সহ-সভাপতি, ইউট্যাব, কেন্দ্রীয় কমিটি