আরমান কবীরঃ দেশের সংবিধান এবং ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর বিধান পরিপন্থি বক্তব্য দেওয়ায় টাঙ্গাইলের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) মো. সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৯ (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। তদনুযায়ী সঠিক ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২৫ মোতাবেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও সুপারভাইজার কর্তৃক তা যাচাই ২০ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। নিবন্ধন কার্যক্রম ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান থাকবে।
ভোটার তালিকা বিধিমালা, ২০১২ এর বিধি-৪(৪) অনুসারে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার ও রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল বা কলেজ বা সমপর্যায়ের মাদ্রাসা, সরকারি বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তথ্যসংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৬ নং অনুচ্ছেদ বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর ১৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পুনঃপরীক্ষণ, সংশোধন বা হালনাগাদকরণ কার্যে কাহাকেও কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এ অবস্থায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯-এর বিধান পরিপন্থি বক্তব্য পেশ করায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
জানা গেছে,মো. সাহাব উদ্দিন গত ২১ জানুয়ারি একটি স্কুল পরিদর্শনকালে বলেন, কিছু শিক্ষক ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজে সম্ভবত চলে গেছেন, তো এই কাজটা শিক্ষকরা এইভাবে করতে পারে না। প্রথমত, শিক্ষকদেরকে দিয়ে এই কাজটি করানোর বোধহয় বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ, শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ কাজটি করার কথা, অতীতে এইভাবে হয়েছে। এরপরেও আমাদের অনেক শিক্ষক আছেন ইন্টারেস্টেড হয়ে ইলেকশন অফিসে বা পরিসংখ্যান অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এই রকমও আছেন আবার অনেক শিক্ষক করতেও চায় না বা অনেক শিক্ষক না জেনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয় এই বছর এই ব্যাপারে তেমন কিছু বলেছেন কিনা আমার জানা নেই। তবে সাধারণত বলেন তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য। সহযোগিতা মানে এই না, তারা স্কুল ছেড়ে দিয়ে ফিল্ডে গিয়ে কাজ করবে। তারা প্রচার-প্রচারণা করবে শিশুদের মাধ্যমে, কমিউনিটির মাধ্যমে, এটার নাম সহযোগিতা। যাই হোক, যাদের নাম দেয়া হয়েছে তারা প্রথমত যে কাজটি করবে সেটি হলো স্কুল আওয়ারের আগে এবং স্কুল সময়ের পরে তারা হালনাগাদ করবে। স্কুল সময়ে কখনো স্কুল ত্যাগ করতে পারবে না। এর পরেও যদি কারো এই সময়ে বাধ্যবাধকতা থাকে তাহলে অবশ্যই ছুটি নিয়ে এই কাজ করতে হবে। ছুটি ছাড়া সে স্কুল ত্যাগ করতে পারবে না।
একজন লোক শিক্ষকের বেতন নিবে আবার ওইদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে বেতন নিবে, এক সঙ্গে একই সময়ে দুইটা সুবিধা পাওয়ার ট্রেজারি রুলের ভাষায় কোনো বিধি-বিধান নাই এবং এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। টিইও সাহেবরা এবং এইউইও সাহেবরা এটা কঠোরভাবে দেখেন। যদি কোনো স্কুলে এরকম পাওয়া যায়। তাহলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো এবং প্রমাণিত হবে আপনি আমি সবাই মিলে অসৎ কাজে আমরা সহযোগিতা করছি।