একতার কণ্ঠঃ সপ্তাহব্যাপী তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জেলার শহর ও গ্রামের জনজীবন। এর সাথে অনাবৃষ্টি যোগ হওয়ায় এক প্রকার বাধ্য না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না জেলা বাসী।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিস। এটিই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে নিশ্চিত করেছেন অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক জামাল হোসাইন।
তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর ৩টায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আরও বাড়বে। সন্ধ্যা ৬টায় সর্বশেষ তাপমাত্রা মাপা হবে। আরও দুইদিন এ দাবদাহ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান এ আবহাওয়াবিদ।
সরেজমিনে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল শহর, দাইন্যা ও হুগড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাইরে আসা লোকজন গরম সইতে না পেরে চায়ের দোকান ও গাছপালার নিচে আশ্রয় নিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে আরও কয়েক গুণ।
রাস্তাঘাট এক প্রকার জন-মানব শূন্য। প্রখর সূর্যের তাপে রাস্তাঘাটে টেকা দায়। বাতাস এলে তার সাথে আসছে ধুলা-বালি ও গরম বাতাস। কেউ বাড়ি থেকে বের হলেও বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও ধুলাবালি থেকে বাঁচতে ছাতা ও মুখে মাক্স ব্যবহার করছে।
হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল বাজারে কথা হয় সবজি বিক্রেতা ঈমান আলীর সাথে। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমে বাজারে কোনো ক্রেতা নেই। পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই তিনি সবজি নিয়ে বসে আছেন বিক্রির আশায়। গরমের কারণে তার বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে।
দাইন্যা ইউনিয়নের বাসাখানপুর বাজারে কথা হয় আখের রস বিক্রেতা মুন্না মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবত তার আখের রস বিক্রি অনেক গুন বেড়েছে। প্রচন্ড গরমে মানুষ বাধ্য হয়েই আখের রস বেশি বেশি খাচ্ছে। বেচা-বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় মুন্নার মুখে তৃপ্তির হাসি।
টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে কথা হয় সাহান হাসানের সাথে। তিনি বলেন, আমি বটতলা থেকে মার্কাস মসজিদে নামাজ পড়তে এসেছিলাম। মসজিদের ভিতরেও প্রচন্ড গরম। এছাড়া ঈদগাহ্ মাঠ যেন ধুলা-বালির রাজত্ব। গরম ও ধুলা-বালিতে টাঙ্গাইল শহরে বসবাস করাই দায়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মশা। কবে যে বৃষ্টি হবে একমাত্র আল্লাহ্ পাক ভালো জানেন।
এ অবস্থায় দেশব্যাপী শুক্রবার তিন দিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
শুক্রবার আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কতা জারির কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়- দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আরও তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়।
এছাড়া সারা দেশে হিট আল্যার্ট জারি থাকলেও কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
অন্যদিকে তাপদাহের চাপে রোগী বেড়েছে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ ও শ্রমজীবীরা।
এমন পরিস্থিতিতে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও তরল খাদ্য গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন জেলার
সিভিল সার্জন।