একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের আওয়ামীলীগের এমপি, প্রতিমন্ত্রী ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। বর্তমানে তাদের সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। অনেকেই আত্মরক্ষার্থে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।
চলমান এই পরিস্থিতিতে জেলায় প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ও শামছুন্নাহার চাপা, সাবেক সংসদ সদস্য ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, সাবেক সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ, সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত আমানুর রহমান খান রানার বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর না করা হলেও তিনি সহ আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক এমপি-প্রতিমন্ত্রী সহ বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন।
জানাগেছে, সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইল শহরে ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টাঙ্গাইলের পরিবেশ। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত আহত হয়।
এরপরই ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের গাড়িতে আগুন ও বাড়িতে ভাঙচুর করে। এরপর আন্দোলনকারীরা টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ার বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস নগরজলফৈ এর দরুণ এলাকায় সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের মালিকানাধীন দি টাঙ্গাইল ফিলিং স্টেশন ও ধ্রুব ইন রেস্তোরাতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওইদিন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল ইসলাম আলমগীরের বাসা ও পৌরসভায় ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেওয়া হয় এবং সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফার বাসায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
এসব হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর গত ৪ আগস্ট রাতে সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক এমপি তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খান আহম্মেদ শুভ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক স্বতন্ত্র এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিনুল রহমান মিরন ও সাইফুজ্জামান সোহেলসহ জেলার নেতারা।
আগের দিন রাতে আলোচনা হলেও পরেরদিন আর তাদের মাঠে দেখা যায়নি। ওইদিন দুপুরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর এমপি ও নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়ে যান। এরপর তারা কে কোথায়, কেউ তাদের হদিস জানে না।
আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, দলীয় মন্ত্রী-এমপি বা জেলার নেতারা কে কোথায় আছেন তা কেউ জানে না। কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু জেলার নেতারাই নয়, উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন। তবে এখনও তাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশে যেতে না পেরে দেশেই আত্মগোপণে রয়েছেন। সুবিধামতো সময়ে অনেকে হয়তো বিদেশে পারি জমাতে পারেন।
একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলে কর্মস্থলে ফেরায় পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। টানা কয়েকদিনের কর্মবিরতির পর ডিউটিতে ফিরেছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। থানার কার্যক্রমের পাশাপাশি সড়কেও দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশরা। এতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে জনমনে। স্বাভাবিক হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সবখানে।
সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল থেকে পুলিশ টাঙ্গাইলের থানায় কাজে যোগ দেওয়া শুরু করেছে। ট্রাফিক পুলিশরাও সকাল থেকে সড়কে ডিউটি পালন করছেন।
দীর্ঘদিন যাবত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও পুলিশের সম্পর্ক সাপে নেউলে অবস্থার পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। নিরাপত্তা ঝুঁকি দাবি করে কর্মবিরতিসহ ১১ দফা দাবি করে পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে পুলিশ কর্মবিরতি পালন করায় সারা দেশে ভেঙে পরে ট্রাফিক সিস্টেমসহ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।
এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতির আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া সাধারণ মানুষ থানায় বিভিন্ন ঘটনার অভিযোগ জানাতে এসে ফিরে যায়। বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এর মধ্যে নতুন পুলিশ প্রধান বাহিনীর সব সদস্যদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। আর তাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসও দেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কড়া নির্দেশ দিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবারের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সকাল থেকে পুলিশ টাঙ্গাইলের থানায় কাজে যোগদানসহ ট্রাফিকরাও সকাল থেকে ডিউটি পালন করছে। অনেক শিক্ষার্থী পুলিশ কর্মস্থলে ফেরায় ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অপরদিকে, সোমবার ও শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়ে যানবাহন চলাচল ও সড়কে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী দেশটাকে ঢেলে সাজাতে দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী শ্লোগান লিখছে। পরিষ্কার করছেন বিভিন্ন স্থান ও রাস্তা।