রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে সিদ্দিকী পরিবারের


০৯:১৩ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে সিদ্দিকী পরিবারের - Ekotar Kantho
লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকী, মুরাদ সিদ্দিক

একতার কণ্ঠঃ টাঙ্গাইলের আলোচিত সিদ্দিকী পরিবারের গুরুত্ব বাড়ছে রাজনীতিতে। এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব কমে এসেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাদের কাছে টানছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে টাঙ্গাইল জেলার আটটি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত দুটি সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। নির্বাচনে দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। এ কারণে বিভিন্ন অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্তদের দলে ফেরানোর নীতি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় এটাকে নির্বাচনের আগে ‘উদারনীতি’ বলে আখ্যা দিচ্ছে।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামে সিদ্দিকী পরিবারের পৈতৃক নিবাস। এই পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার স্নেহধন্য ছিলেন। পরিবারের সদস্য, বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। আরেক ভাই আবদুল কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখায় বীর-উত্তম খেতাব পান। তিনি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। আরেক ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে তুলে নেন সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যরা। পরে তাঁরা ভারতে আশ্রয় নেন। দেশে ফিরলে কারাবন্দি হন লতিফ সিদ্দিকী। সাত বছর জেল খাটেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সিদ্দিকী পরিবারের সদস্যরা পরে একে একে আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়েন।

১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গড়েন কাদের সিদ্দিকী। তাঁর সঙ্গে যান ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকীও। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে একটি মন্তব্যের জেরে দল থেকে বাদ পড়েন লতিফ সিদ্দিকী। তাঁকে হারাতে হয় মন্ত্রিত্ব, প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য পদও।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানায়, মাস দেড়েক আগে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কাদের সিদ্দিকী। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর প্রায় দুই যুগের দূরত্ব কমতে থাকে।

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ এখন পুরনোদের দলে ফেরানোর নীতিতে চলছে। দল এখন উদারনীতি নিয়েছে। অতীতে যে যাই করে থাকুক, অতীতে যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলেই মাফ করে দেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচনে আ. লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের পক্ষে থাকবেন কাদের সিদ্দিকী : আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থানে থাকলেও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকবেন কাদের সিদ্দিকী। তবে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে থাকবেন নাকি আসন সমঝোতা হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কাদের সিদ্দিকী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এবং ২০০১ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসন থেকে এমপি হন। গত ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেন। টাঙ্গাইল-৪ ও ৮ আসনে তাঁর দলের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। নিজে নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাঁর মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।

তবে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাতের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। গত ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে কাদের সিদ্দিকীর এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। এ অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশে মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘আসুন আমরাও আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই।

অনুষ্ঠানে যোগদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৃণাল কান্তি জানান, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে আদিষ্ট হয়ে আমি কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে যোগদান করি। তিনি একজন কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর প্রতি আমার ব্যক্তিগত বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে।’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বীর প্রতীক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাতের পর দেশের মানুষ ও দলের নেতাকর্মীরা নতুন ভাবনা ভাবছেন।

এলাকামুখী হয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা হলো লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচনী এলাকা। তিনি ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব, প্রেসিডিয়াম সদস্য, দল ও সংসদ সদস্য পদ হারানোর পর এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি বা তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন।

সম্প্রতি কালিহাতীতে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন লতিফ সিদ্দিকী। ফলে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

কালিহাতীর নারান্দিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু বকর বলেন, ‘সময় ও জাতির প্রয়োজনে তাঁকে দলে নেওয়ার দাবি করছি।’

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলের একটি সূত্র মতে, শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী বা তাঁর সহধর্মিণী লায়লা সিদ্দিকীকে দলের মনোনয়ন দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। লায়লা সিদ্দিকী ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এবং ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী কারাবন্দি ছিলেন।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি লতিফ সিদ্দিকী। তবে লায়লা সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ। পুরো সিদ্দিকী পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল ছিল, আছে।’ তিনি বলেন, ‘দল বা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেন আমরা সেটার সঙ্গে থাকব।’

লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে দীর্ঘদিন বিরোধ ছিল ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকীর। সম্প্রতি সে বিরোধও কমেছে। একাধিক অনুষ্ঠানে দুই ভাইকে এক মঞ্চে দেখা গেছে।

জেলা আ. লীগে স্থান পাচ্ছেন মুরাদ সিদ্দিকী : আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেতে যাচ্ছেন মুরাদ সিদ্দিকী। তিনি ২০০৮ সাল পর্যন্ত কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তবে এখন পর্যন্ত দলে কোনো পদ পাননি।

মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার একজন কর্মী। টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে আমি গর্বিত। কৃষিমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমি সম্মেলনে অংশ নিই। সারা জীবন দলের হয়ে কাজ করে যেতে চাই।’

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। তাঁকে নিয়ে জেলার নেতাদের কোনো আপত্তি আছে বলে আমার জানা নেই।’

নাখোশ জেলা আ. লীগের একটি অংশ : ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সমালোচনা করেন কাদের সিদ্দিকী। তাঁর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান আনছারী বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী জোটে আসার ইঙ্গিত পেয়ে আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু তিনি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিন্দনীয়।’

সংবাদ সূত্র – “কালের কণ্ঠ” অনলাইন


পাঠকের মতামত

-মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নিউজটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।