‘টাকা চাই না, আমার স্ত্রীর লাশটা চাই’


০৮:৩০ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২২
‘টাকা চাই না, আমার স্ত্রীর লাশটা চাই’ - Ekotar Kantho

একতার কণ্ঠঃ ‘সব দোষ আমার। আমার জন্যই সে বিদেশে গিয়েছিল। বিদেশে না গেলে আজ হয়তো এভাবে তার মৃত্যু হতো না। আমি অসুস্থ মানুষ, আমাকে ফেলে রেখে চলে গেছে। আমার স্ত্রীর লাশটা দেখতে চাই। তার লাশটা নিজ হাতে কবর দিতে চাই। টাকা চাই না, আমার স্ত্রীর লাশটা চাই।’

কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি বাড়িতে আগুন লেগে মারা যাওয়া আছিয়া বেগমের (৫০) স্বামী ইসমাইল হোসেন। তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভার কুমারগাতা এলাকার বাসিন্দা জরিপ আলীর মেয়ে আছিয়া বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর ইসমাইল হোসেনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর ইসমাইল অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামী অসুস্থ ও চার ছেলেমেয়ে ছোট থাকায় পরিবারের হাল ধরতে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আছিয়া বেগম।

২০১০ সালে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি মালদ্বীপে পাড়ি জমান। তার স্বপ্ন ছিল পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানো। কিন্তু এর আগেই মালদ্বীপে আগুনে তিনি পুড়ে মারা যান। গত ১০ নভেম্বর সকাল ১০টায় হঠাৎ বড় মেয়ে নুর নাহারের মোবাইল ফোনে কল আসে মালদ্বীপ থেকে। সে সময় তার মায়ের মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়। এই খবরে মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

আছিয়া বেগমের মেয়ে নুর নাহার বলেন, ‘আমার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আমরা চার ভাই-বোনও ছোট ছিলাম। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় সংসারের হাল ধরতে মা মালদ্বীপে পাড়ি জমান। মা চেয়েছিল সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে। কিন্তু তার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না। এখন আমার মায়ের লাশটা ফেরত চাই। আমার মায়ের লাশটা দ্রুত দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা নেওয়া জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বড় ছেলে আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মা বিদেশে যায়। আমি রিকশা চালাই, ছোট ভাই ইটভাটা শ্রমিক। আমাদের রোজগারের টাকা মাকে খাওয়াতে পারলাম না। শেষবারের মতো মায়ের লাশটা দেখতে চাই। মায়ের লাশটা ফেরত দেন।’

আছিয়া বেগমের ছোট ভাই তাজমল হোসেন বলেন, ‘স্বামী অসুস্থ থাকায় সংসারের হাল ধরতে আমার বোন বিদেশে পাড়ি জমায়। তার ইচ্ছা ছিল স্বামীর চিকিৎসা ও সংসারে অভাব-অনটন দূর করার। বাড়িতে ভালো ঘর করার। কিন্তু তার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মালদ্বীপে মারা যাওয়া আছিয়ার লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তার পরিবার খুবই দরিদ্র। তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলা হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে একটি বাড়িতে আগুন লেগে বাংলাদেশিসহ ১০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মালের মাফান্নু এলাকার ওই বাড়িতে থাকতেন তারা। যেখানে আগুন লেগেছিল, এটি ঘনবসতি এলাকা হিসেবে পরিচিত।


খবরটি শেয়ার করুন

কপিরাইট © ২০২২ একতার কণ্ঠ এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি ।