একতার কণ্ঠঃ সারাদেশের ন্যায় রোববার (২৬ ডিসেম্বর) চতুর্থ ধাপে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ও গাবসারা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা দুটিতে নৌকার ভরাডুবির জন্য আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরাই দায়ী, এমনটাই দাবি করেছে উভয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধীক নেতাকর্মী নৌকার বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্য ও গোপনে কাজ করেছে। এমনকি নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের পরে নেতা কর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. মতিন সরকার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন একই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক মাসুদ। তিনি আনারস প্রতীকে নির্বাচন করে ৮ হাজার ৭শত ৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মতিন সরকার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৫’শ ৮৬ ভোট। নৌকার প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ১১৯৪ ভোটে পরাজিত হন।
অপরদিকে, গাবসারা ইউনিয়ন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ্ আলম আকন্দ শাপলা আনারস প্রতীকে ৬৫০০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এদিকে নৌকার ঘাটি হওয়া সত্বেও দলীয় কোন্দলে নৌকার প্রার্থী আওয়ামীলীগের প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান নৌকা প্রতীকে ৫৮৭০ ভোট পেয়েছেন। তিনি মাত্র ৬৩০ ভোটে পরাজিত হন। এখনই দলীয় কোন্দলই নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের মূল কারন।
অন্ত:দলীয় কোন্দল থাকায় গাবসারা ইউনিয়নে কোন পোষ্টার লাগাতে পারেনি নৌকার কর্মী ও সমর্থকরা। উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের বাড়ী হওয়ায় সেখানেও পোস্টার না লাগানো নিয়ে হতাশ ছিলেন নেতাকর্মীরা। উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নিজ কেন্দ্রে ১৪০৩ ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছেন মাত্র ২৩ ভোট।
এ বিষয়ে, নিকরাইল আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নয়ন সরকার বলেন, নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ঘাটি। এ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের হেভীওয়েট এক নেতা নৌকার পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাজ করায় এ পরাজয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে তাকে ফুলের মালা দেয় এমনচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে দলীয় কোন্দল দেখা দেয়। এতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার কারণেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মতিন সরকার হেরেছে।
নৌকার প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের অনেক নেতা নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় এ পারাজয়। আওয়ামীগের নেতা-কর্মীরা যদি একযোগে নৌকার পক্ষে কাজ করতো তাহলে নিকরাইলে নৌকার জয় ছিলো নিশ্চিত কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় নিকরাইলে দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে। ফলে নৌকার নিশ্চিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আবেদন জানাবো।
প্রসঙ্গত, ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দিদারুল আলম খান মাহবুব, ফলদা ইউনিয়নে সাইদুল ইসলাম তালুকদার, গোবিন্দাসী ইউনিয়নে দুলাল হোসেন চকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী গাবসারা ইউনিয়নে শাহ আলম ও নিকরাইল ইউনিয়নে মাসুদুল হক মাসুদ জয়লাভ করেছেন।। ভূঞাপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও দুইটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এএইচএম কামরুল ইমলাম জানান, স্থগিত ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে। ভূঞাপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও দুইটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।