একতার কণ্ঠঃ পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। পাকিস্তানী সেনা বাহিনী বাঙালী নিধনের উৎসবে মেতেছিল। তাদের পরিচালিত সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের স্থান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সারা বাংলাদেশে। সেই সব বধ্যভূমির সবগুলো এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশের সকল জেলায় ‘গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার’ শিরোনামে নাটক নির্মাণ করছে।
এবছর বাঙ্গালী জাতির গৌরবের বছর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে লাখো শহীদের শবের পলিতে উর্বর জনপদ এই বাংলায় মহান স্বাধীনতার সুবর্ণবর্ষ পালন করার প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনে বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। এসব কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির বীর সন্তানদের যে ত্যাগ তার মহিমাকে নতুন প্রজন্মের সামনে বিভিন্ন প্রযোজনার মাধ্যমে তুলে ধরা এবং বাঙ্গালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে শিল্পের আলোয় নতুনভাবে পাঠ ও সংরক্ষণসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করা। আর সেই লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের বধ্যভূমি নিয়ে নির্মিত হচ্ছে না খুলি।
“খুলি” বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বলি হওয়া মানুষের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত নাটক। নাটকটি লিখেছেন ড. তানভীর আহদে সিডনী, নির্দেশনা দিয়েছেন প্রফেসর ড. মীর মেহবুব আলম নাহিদ। সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. এরশাদ হাসান।
এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ডক্টর মোঃ আতাউল গনির সভাপতিত্বে প্রেস ব্রিফিংয়ে নাটকটির রচয়িতা ডক্টর তানভীর আহমেদ সিডনী ও সহযোগী নির্দেশক শামীম সাগর ও জেলা কালচারাল অফিসার এরশাদ হাসান নাটকটির বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
বক্তরা জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে টাঙ্গাইল পানির ট্যাংক বধ্যভূমি এলাকায় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বীর বাঙ্গালীর উপর নির্মম অত্যাচারের সঠিক চিত্র নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এ আয়োজন। শনিবার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহা-পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে নাটকটির উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক, সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার ও সমন্বয়কারী মো. এরশাদ হাসান বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে এই বিশাল কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছি। আগামি ২০ নভেম্বর পানির ট্যাংক বধ্যভূমিকে উন্মুক্ত মঞ্চ করে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সকলের উপস্থিতি কামনা করছি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল সার্টিক হাউসে অবস্থান নিয়ে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ। রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় টাঙ্গাইল শহর আর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে আনতো এই সার্কিট হাউসে। নির্যাতন চালানোর পর এই পানির ট্যাংকি এলাকায় নিয়ে তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হতো।