একতার কণ্ঠঃ স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্তের শিকার হতো এক শিক্ষার্থী। উল্টো তার ঘাড়েই দোষ চাপাতেন শিক্ষকরা। করতেন বকাঝকা। এসব সইতে না পেরে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রী। বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের মটরা সাহাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী আলিফা খানম জুঁই বাসাইল উপজেলার লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
অভিযুক্ত বাঁধন ওরফে পিচ্চি বাঁধন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া গ্রামের প্রবাসী কামরুল ইসলামের ছেলে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা কারেছেন নিহত ছাত্রীর দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ুম।
আসামিরা হলেন, বাঁধন ওরফে পিচ্চি বাঁধন, লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরজু জমাদার, সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ ও সহকারী শিক্ষক তাছলিমা খাতুন ছবি।
জানা গেছে, মেয়েটির মা-বাবা ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থেকে লেখাপাড়া করতো সে। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে বাঁধন ওরফে পিচ্চি বাঁধন। সম্প্রতি উত্ত্যক্তের মাত্রা বেড়ে যায়। এসিড দিয়ে ছাত্রীর মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার বিকেলে বাঁধনসহ তার পরিবার এবং ছাত্রীসহ তার পরিবারকে ডেকে নেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেখানে বাঁধনকে শাসিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রীর ওপর দোষ চাপিয়ে বকাঝকা করা হয়। বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফিরে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেয় সে। পাশেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল ‘আমি দোষী নই।’ খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বাসাইল থানা পুলিশ।
শিক্ষার্থীর মা রূপা বেগম বলেন, বখাটে বাঁধনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরজু জমাদার বলেন, আমরা দুই পরিবারের লোকজন নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে বাঁধনকে শাসিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করল আমরা বুঝতে পারছি না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মতিউর রহমান খানের ভাষ্য, খবর পেয়ে মেয়েটির বাড়ি ও বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। বখাটে বাঁধনের উত্ত্যক্তের বিষয়টি সত্য। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেস্তাফিজুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জায়গা, বিচারের জন্য নয়। প্রধান শিক্ষক বিষয়টি প্রশাসন অথবা পুলিশকে জানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। উল্টো ওই ছাত্রীকেই বিচারের নামে বহু মানুষের সামনে দোষারোপ করেছেন। অপমান সইতে না পেরে সে চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার জানান, উত্ত্যক্তের বিষয়টি আমাদের আগে জানানো হয়নি। জানলে হয়তো ব্যবস্থা নিতে পারতাম। যেহেতু মামলা হয়েছে, তাই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আমি আশা করি।